তুমি হীন (পর্ব ২)

রাহুল
রাহুল
লেখক

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
৬ মাস পর প্রিয় মানুষটার ফোনে ফোন ডুকলো যতবার রিং বাজতেছে ততবারেই বুকটা কেঁপে উঠতেছে। কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে ও ফোন রিসিভ করলো ৩৩ সেকেন্ড কোনো সাড়াশব্দ নেই, নিলয়ের মুখ থেকে ও কোনো কথা বের হচ্ছে না। তারপর নিরবতা ভাঙে ঐপাশ থেকে ভেসে এলো সে-ই পুরনো মানুষটার চির চেনা সুর "কেমন আছেন"
আর এদিকে নিলয় অস্থির হয়ে গেছে। কোনো কথা বের হচ্ছে না। কান্না কান্না গলায় বললো "তুমি কেমন আছো"

মুমমুম: আমি ভালোই আছি। আপনি কেমন আছেন।

নিলয়: বেঁচে আছি সেটাই অনেক আরো ভালো থাকা।আর বলো এতদিন কোথায় ছিলে ফোন বন্ধ করছো কোনো, ফেসবুকে ও আসো না, কোথায় কোথায় খুঁজছি কতবার ফোন দিছি, সারা শহরে খুঁজছি কিন্তু কেউ তোমাদের কথা বলতে পারে নাই। ওমনি ওমনভাবে কাউকে না জানিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছিলা কোনো। আমাকে তো বলবে। কোনো যোগাযোগ করো নাই কেনো।

মুমমুম: সেদিন করার কিছু ছিলো না। সব ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে আমার। বাবা-মা কেউ আমার কথা শুনেনাই। জোর করে বিয়ে দিয়েছে। ছেলে পক্ষ সেদিন দেখতে আসছিল আর সেদিনেই আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যায়।

নিলয় কান্না করতে করতে প্রায় শেষ। তার বিয়ের কথা শুনে নিশ্বাস নিতেও কেমন কষ্ট হচ্ছে। যেটা ভেবছিল এতোদিন থেকে সেটাই হলো। এবার মনে হয় নিলয় বোবা হয়ে গেছে কোনো কথা মুখে আসে না। আর যেগুলো আসে সেগুলো বুঝতে পারেনা মুমমুম।

মুমমুম : আচ্ছা ভালো থাকবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন। আমার কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিয়েন না। ভুলে যাইয়েন আমাক আমিও আপনাকে ভুলে গেছি।

নিলয়: হুম

মুমমুম : এখন স্বামী কে নিয়ে অনেক সুখেই আছি। আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে। সে অনেক ভালো মানুষ। কোনো কিছুর কমতি রাখে না। অনেক খেয়াল রাখে। কোনো আবদার করলে অপূর্ণ রাখেনা। যাইহোক আপনি ও আমার থেকে বেটার কাউকে পাবেন। আমি আপনার জন্য ডির্জাব করিনা। এখন থেকে নিজেকে সামলান কতদিন আর আবেগ নিয়ে চলবেন। বর্তমান আবেগ দিয়ে কিছু হয়না। আমার জন্য কান্না করে কোনো লাভ নাই। আমি এখন অন্য কারো হয়ে গেছি। আর চাইলে ও আমরা এক হতে পারবো না। সো আর কষ্ট পাইয়েন না। একটা সুন্দর মনের মানুষ দেখে বিয়ে করে নেন। আপনার স্ত্রী কে ভালোবাসবেন। দেখবেন আপনাদের মতো কেউ সুখী হবে না। একটা ছোট্ট সংসার তৈরি করুন আপনি আর আপনার স্ত্রী। ভালোবাসবেন আগলে রাখবেন আচ্ছা কথা গুলো যেনো মনে থাকে। আমি কয়েকমাসের মধ্যে যেনো খবর পাই যে আপনি বিয়ে করতেছেন। আর বিয়ে করার ১০ দিন পর আমাকে জানাবেন ওকে।
আর একটা কথা শুনেন.. আপনি আছেন.. শুনতেছেন তো কি বলতেছি।

নিলয়: হুম বলো শুনতেছি।

মুমমুম: শুনেন তাহলে আমি কোনোদিন কখনো আপনার কাছে কোনো আবদার করি না-ই। এবার একটা আবদার করবো রাখবেন তো...

নিলয়: হুম রাখবো।

মুমমুম: আপনি নিজেকে শক্ত করবেন। আমার কথা বেশি ভাববেন না। যতই ভাববেন ততই কষ্ট বেশি পাবেন। নিজের কথা ভাববেন। আপনার পরিবারের কথা ভাববেন। আর জবটা ঠিক মতো করবেন। কয়েকমাসের মধ্যে একটা ফুটফুটে আমার থেকেও সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করবেন। আর আমাকে জানাবেন। বিয়ে করার ১০দিন পরে। তার আগে না। আর যদিও না জানান তবুও আমি খুশি হবো। আচ্ছা মনে থাকে যেনো আর প্লিজ এই আমার আবদার টা রাখিয়েন প্লিজ।

নিলয়: আচ্ছা রাখার চেষ্টা করবো।

মুমমুম: চেষ্টা না আমাক কথা দিয়ছেন রাখতেই হবে। আচ্ছা তো ভালো থাকিয়েন বায়। আল্লাহ হাফেজ।

নিলয়: আচ্ছা আর শুনো.....
কি হলো...
শুনো না...
ও-ই...

কোনো সাড়াশব্দ নেই। ফোন কেটে দিয়েছে মুমমুম।
আবার নিলয় বেগ করলে কিন্তু সেই আগের এক কথা "সংযোগ দেয়ার সম্ভব হচ্ছে না"
প্লিজ আর একটি বার কথা বলো। শুধু একবার ভালোবাসি বলো। তুমিই সবকিছু বললে আমি কিছুই তো বলতে পারলাম না। প্লিজ..
ও-ইইই.. 😩
চিৎকার করে কথা গুলো বলতেছে নিলয়।
আর কান্নায় ভেঙে পড়তেছে । ২০ মিনিট কান্না করার পর স্বাভাবিক হলো। আর হয়তো চোখে পানি নেই চোখগুলো ও লাল হয়ে গেছে। ব্যাথা করতেছে।
মনটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে তবুও কান্না করার ইচ্ছে করতেছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে ভাবতেছে ছেলেদের কাঁদতে নাই আর আমি সবসময় কান্নায় পড়ে থাকি। কার জন্য কাঁদতেছি যে আর কখনো আমার হবে না যে অন্য কারো হয়ে গেছে। যে তার জামাই কে নিয়ে সুখেই আছে।
😩😩😩
কেমনে তোমার আবদার রাখবো তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে এক সেকেন্ড ও ভাবি নাই। তোমার জায়গায় অন্য কাউকে কেমনে দিবো। এতো দিনের দূরত্বে তোমার প্রতি ভালোবাসা এক বিন্দু ও কমেনাই কিন্তু বেড়েছে হাজার গুণ। প্রতিটা মূহুর্ত জানে তোমার শূন্যতা কতটা কষ্ট দেয়। আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লো... নিলয়

এভাবেই প্রতিটা দিন/ রাত চলে যায় কান্না করতে করতে।

কয়েকদিন পর..
মুমমুমের আবদার রাখতে হবে তাই স্বাভাবিক হওয়ার, নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতেছে। আগের মতো কান্নায় ভেঙে পড়েনা। ঠিক মতো খাওয়া ও করতেছে, জব ও ঠিক মতো করতেছে। কারণ সেই আবদার টা মুমমুমের ছিলো প্রথম আর সেটাই হয়তো লাস্ট তাই জন্য। প্রিয় মানুষের আবদার পূর্ণ করতেতেই হবে প্রিয় মানুষের কোনো কিছু অবহেলা করার যায় না।
মানুষটা নাই তো কি হয়েছে তার দেয়া আবদার টা আছে।
হাজারো কষ্টের পরও সেই কথাগুলো নিলয় ভুলতে পারেনা। মুমমুম কে কথা দিয়েছে। তাই কথাও রাখতে হবে।


কেটে গেলো ৭টা মাস। নিলয় আগের থেকে অনেক স্বাভাবিক হয়ে গেছে। দেখে মনে হবে কোনো দূঃখের ছায়া ও তার আশে-পাশে নাই। অনেক সুখেই আছে। কিন্তু সেই ছেলেটাই এখনো একজনের জন্য রাতের শেষ পহরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে গেছে কান্না করার।
তবুও প্রিয় মানুষের আবদার পূর্ণ করতে স্বাভাবিক থাকে। ভেতরে ভেঙেচুড়ে শেষ হয়ে গেছে। আর বাইরে সে অনেক স্বাভাবিক।
হাজারো চেষ্টার পড়েও ভুলে থাকতে পারে না।
এখন প্রিয় মানুষটার ইচ্ছের মতো সবকিছু হয়ে গেছে এখন শুধু বিয়েটা।
দুইটা মাস কনে দেখতে দেখতে কেটে গেলো। কিন্তু নিলয় একটা মেয়েকে ও পছন্দ করতেছে না কারণ মুমমুমের মতো তার মুখের/চোখের মায়ার মতো কাউকে পাচ্ছেনা। মন কাউকে চায়না শুধু মুমমুম কে খুঁজতেছে। কিন্তু কোথাও মুমমুমের দেখা নাই।

অবশেষে নিলয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়ের সাথে। তার মুখের কাট, তাকানোর চাহনি, কথা বলা মুমমুমের সাথে একটু একটু মিলে আছে তাই নিলয় রাজি হয়ছে।
আজ তার বিয়ে। বর সেজে রেডি হয়ে আছে। তবুও চোখের কোণে পানি এসে জমেছে। রুম থেকে সবাই কে বের করে দিলো। একলা থাকতে চায়। শুধু মুমমুমের কথা মনে পড়তেছে। এই বুঝি সে আসবে আর বলবো চলেন পালিয়ে যাই। আপনি শুধু আমার অন্য কারো হতে দিবো না।

বর সেজে নিলয়, কনে সেজে লাকি।

নিলয় বারবার তাকাচ্ছে লাকির দিকে এটা ভেবে যে এইটা মুমমুম।

অবশেষে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
কেটে গেলো ১০ টা দিন।
মুমমুমের কথা মতো বিয়ের ঠিক ১০দিন পরেই ফোন দেয়। কিন্তু আজকে "সংযোগ দেয়ার সম্ভব হচ্ছে না" কথাটা বললো না। রিং হচ্ছে..
চলবে...
267 Views
7 Likes
4 Comments
5.0 Rating
Rate this: