রঙ্গ মঞ্চ

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মফিজের দুই ছেলে রেখে ছোট বেলায় ব‌উ মারা গেছে। মফিজ রিকশা চালায়, ছেলেরা লেখা পড়ায় জিরো।শুধু পাড়ায় পাড়ায় আড্ডা মারে। কোথায় কোন যাত্রাপালা, নাটক, গান হলে সেখানে তাদের স্বর্গ হয়।এই বছরে দুই ভাই ইন্টারে ,কোন রকমে পাশ মার্ক পেয়েছে। সমবয়সী সবাই বলে ভন্ড। বয়স্ক মানুষে বলে লম্পট আর মেয়েরা তো লুচ্চা নামে চিনে। কিন্তু এতো নাম নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। বলে মানুষ আমাদের ভালো দেখতে পারে না। তবে চোখ ভর্তি স্বপ্ন, একদিন অনেক টাকা ইনকাম করবে। দুজনেই খুব অলস তারা বলে বোকা মানুষ কষ্ট করে ইনকাম করে।আর চালক লোকে সট খাট রাস্তা বেছে নেয়া। আমরা বোকা ন‌ই যথেষ্ট চালক।কিন্তু বার বার যৌবিক চাহিদার কাছে হেরে যায়।

দুই ভাই দেখলে মনে হয় বন্ধু অথবা বেয়াই। দু'জনেই এক সাথে থাকে, হাটে,চলে। এমন কি প্রেম করতে, মেয়ে দেখতে, গেলেও এক সাথে যায়। সবাই বলে দু'টোই নির্লজ্জ ভাই ভাই মনে হয় বায়রা।

রানা বললো- ভাইয়া মেলায় যাবি?
রেজা- যেতে পারি কিন্তু একটা মেয়ে পছন্দ করে দিতে হবে।
রানা:- আরে ভাই আগে বলবা না। এটা কোন ব্যাপার না । কিন্তু দেবর ভাবীর মাঝে তুমি আসতে পারবা না।
রেজা:- ঠিক আছে,আগে ভাবী খোঁজ।

মেলা থেকে আসার সময় রাজু দুটো মেজিকের বাই কিনলো।
একটায় বিভিন্ন ট্রিক্স, অন্যটায় কিছু যাদু মন্ত্রর আর তাবিজের নকশা। রানা দেখে বলল-
ভাই কপাল খুলে গেছে।
রেজা:- কিভাবে?
রানা ব‌ই দেখালো.মেয়ে পাগল করার তদ্বির। নিজেকে অদৃশ্য করার শক্তি, শূন্য ভেসে থাকার তদ্বির,আরো হাজারো বিষয়ে। দুই ভাই আনন্দে আত্মহারা।

বিকেলে দুই ভাই বসে ব‌ই পড়ছে।

রানা বলল- প্রথমে আমি মেয়ে পাগল করা শিখবো।
রেজা:- আমি জ্বীন হাজির করিয়ে তাকে দিয়ে সব কাজ করাবো।
রানা:- ভাই আমার কিন্তু ভয় করে যদি জ্বীনে আমাদের ক্ষতি করে।
রেজা-দুই চারটে জ্বীনের সাথে মারামারি করতে পারবো।

প্রায় দুই মাস কঠোর পরিশ্রম করে দুই ভাই সব কিছু শিখে নিল এখন শুধু কাজে নামতে হবে।
রানা পাশের বাড়ির ময়নার কাপড়ের টুকরা এনে,মন্ত পড়ে ধুপ দিয়ে জ্বালিয়ে দিল।
ময়নার ভালোবাসা পাওয়া আশায় তাদের বাড়ির পাশে ঘোরাঘুরি করে।
আর ভাবছে ময়না প্রেমে পাগল হয়ে আসবে।
হঠাৎ ময়না বাঁশ নিয়ে ছুটে আসলো।
রানা কিছুটা ভয় পেল কিন্তু ভাবছে এমনি বাঁশ নিয়ে যাচ্ছে।এসেই রানা কে পিটিয়ে আহত করলো। কোন ভাবেই জীবন নিয়ে পালিয়ে গেল।

হাতে ব্যান্ডেজ ছিল অনেক দিন। রানা ভাবছে..
ব্যপার না মাইর যখন খাইছি, প্রেম তো করতেই হবে।

রেজা বলল- কি হয়েছে তোর প্রেমিকা ভালোবাসা দিসে বুঝি?
রানা:- ভাইয়া তুমি ও।
রেজা:- হাসতে হাসতে বললো ঠিক আছে আমি না হয় চুপ থাকলাম।
গ্রামের মানুষ বলে যে ময়না কে কি করছো?
কেন তোকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিলো?
রানা:- ভাইয়া থামো এখন, দেখে নিও ওরে পাগল করে ছাড়বো।

দুই ভাই এক দিন রাতে রুমের দরজা বন্ধ করে।
রেজা জ্বীন হাজির করার জন্য ধ্যানে বসলো।

রানা কে বললো যদি জ্বীন আসে, আমাকে যদি আঘাত করতে চায় তুই এই পানি ছিটিয়ে দিবি। তাহলে কিছু করতে পারবে না।

ধুপ জ্বালিয়ে,গোলাপ জল ছিটিয়ে, দরজা -জানালা বন্ধ করে বসলো। সামনে অনেক গুলো মোমবাতি জ্বলছে।
হঠাৎ জানালা ঠাস ঠাস করে খুলে গেল।
রানা ভয় পেয়ে গেল। প্রচন্ড বাতাসে জানালার কপাট ঠাস ঠাস করছে।
মোমবাতি নিভু নিভু করছে,কে যেন চিৎকার দিল বাঁচাও বাঁচাও বলে।
ভয়ে রানার গলা শুকিয়ে গেল।
বুকের ভিতর শুধু ধুপ ধুপ করে শব্দ হচ্ছে। রানা দেখছে একটা বাঘ হা করে রানার কাছে দৌড়ে আসছে।
রানা চিৎকার দিয়ে রেজাকে জড়িয়ে ধরল।
রেজা সবাই চিৎকার শুনে চলে আসলো।
এসে দেখে রেজা শরীরের ধুলা বালি।
রেজা খাটের নিচে লুকিয়ে আছে। লুঙ্গি সার্ট অনেক জায়গায় ছিঁড়ে গেছে।
রানা ঘরে নেই পিছনে গাছের ডালে ঝুলছে।

পড়ে সবাই জিগ্গেস করলো কি হয়েছে।
বলল- ঘরে ভুত আছে, ভুতের সাথে মারামারি করছি।

রাতে দুই ভাই নাটক দেখে বাড়ি রহনা দিল।
রাত প্রায় আড়াইটা হবে, রানার ভয় করছে রেজা হাত ধরে নিল।
কিছু দূর যেতেই পিছনে শুনলো কেউ কথা বলছে। তাকিয়ে দেখে কেউ নয়।
তারপর হাঁটতে শুরু করল, হঠাৎ চার পাশের গাছগুলো ভেঙ্গে মাটিতে পড়লো।
রেজা একটা মন্ত পড়ে নিজের এবং রানার বুকে ফু দিল।
দুই ভাইয়ের ভয়ে শরীরের পশম গুলো দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু দূর যেতেই দেখলো রাস্তায় মাঝে একটা তাল গাছের মতো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।
রেজা ভয়ে ভয়ে সামনে পা দিল, কিন্তু রানা পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
কাছে গিয়ে দেখলো কিছু নাই। রেজা রানাকে ডাক দিয়ে বললো-
এতো ভয় পাইলে হবে। এই দেখ কিছু নাই। দুজনে সারা রাত হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত।
ভোরের আজান দিল পরিস্কার হয়ে গেছে।
তাকিয়ে দেখলো এখন সেই নাটকের জায়গায় আছে।

রেজা এবং রানা আজকে অনেক বড় একজন ওঝাড় কাছে আসলো।
সে দেখেই বললো -
তোদের ভয় দেখায়। রাতে হাঁটতে দেয় না।
তোদের জীবনের ঝুঁকি আছে।
দুজনেই ওঝার পায়ে পড়ে বলল-
ওস্তাদ কিছু একটা করুন।
ওঝা- তোরা অনেক কিছু জানো। কিন্তু এক জন গুরুর অনুমতি ছাড়া কিছুই করতে পারবি না।
দুই ভাই -
আপনি আমাদের গুরু হোন।
টাকা পয়সা যা লাগে সব কিছু দিমু।
ওঝা- আমার সাথে দুই মাস কাজ করতে হবে।পারবি বল?
দুই ভাই- হ পারবো।

দুজনে লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ি গেল।
ময়না খবর পেলেই লাঠিচার্জ করতে আসবে তাই।
বাড়ি থেকে দুই ভাই চাকরির কথা বলে বিদায় নিয়ে আসলো।
পথে হঠাৎ তাকিয়ে দেখে ময়না হাতে দা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দেখার সাথে সাথে বলল- আজকে পাইছি তোর মাথা খামু
রানা ভয়ে ভয়ে রেজা কে বলল-
ভাই জিনিস তো জায়গা মতো হাজির
রেজা:-দূর বেডা ভয় পাবার কি আছে। আমি সামলে নিব।
রেজা ভয়ে ভয়ে সামনে গিয়ে বললো সরে যা ।
না হলে আজকে তোর খবর আছে।
ময়না:- তোকে একটা কামড় দিমু বলে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো মনে হয় ফুলে উঠছে।
রানা:-ভাইয়া আমার ভয় হচ্ছে কিন্তু?
রেজা : - তোর ভাই থাকতে কি চিন্তা করো।
আমি শাহরুখ খান এর চেয়ে কম কিসে।
রেজা আস্তে আস্তে ময়নার কাছে যেতেই দা দিয়ে দিল তাড়া ওরে বাবা বলে দিল দৌড়।
ভাই আগে জীবন বাঁচা পড়ে প্রেম কর।রানাও দিল দৌড়।

অনেক দৌড়াদৌড়ি করে পাশের বাড়ির পুকুরে দাঁড়িয়ে আছে।
ময়না পুকুর পাড়ে বসে আছে হাতে দা নিয়ে। সবাই এসে দুই ভাই কে উদ্ধার করলো।

ওঝার কাছে গিয়ে বললো- গুরু এই সমস্যা বাড়িতে থাকতে পারি না।
ওঝা সব কিছু শুনে বলল আমি থাকতে চিন্তা করিস না।
এখন আমার সাথে চল একটা মেয়ের জ্বীন ছাড়াতে হবে।
বাড়িতে গিয়ে দেখলো একটা যুবতী মেয়ে।
ফোঁস ফোঁস করছে আর মুখে যা আসে তাই বলে সবাই কে গালি দিচ্ছে।
ঘরে ঢুকতেই মেয়েটা একটা লাঠি ছুড়ে বললো- চলে যা,এখান থেকে চলে যা। না হলে তোর গাঁড় মটকে দিব।
লাঠিটা রানার পায়ের কাছে পড়তেই লাফিয়ে উঠলো।ভয় পেয়ে সে ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে।
ওঝা-বললো তুই আমাকে চিনতে ভুল করছো।তোর মতো কতো দেখলাম।
মেয়েটি- চিৎকার দিয়ে তেড়ে আসলো আর বলল-
আমি তোর গাঁড় মটকে দিব।
হঠাৎ এভাবে ছুটে আসাতে রেজা, রানা ভয়ে পিছনে চলে আসলো।
ওঝা- কিছু একটা ধুলো গায়ে ছিটিয়ে দিল।
মেয়েটা চিৎকার দিয়ে পিছনে দৌড়ে আসে বেহুঁশ হয়ে পড়ল।
ওঝা কাছে গিয়ে বসে ধুপ,চন্দন,মরিচ,এর ধোঁয়া দিয়ে। কিছু মন্ত পড়ে মেয়েটির ছায়ার উপর আঘাত করছে।
কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি চিৎকার দিয়ে উঠলো বললো আর মেরো না। তুমি যা বলবে তাই করব।
ওঝা-তোর নাম কি
মেয়েটি:- কায়রা
ওঝা-বয়স কত
মেয়েটি- ৫০০বছর
ওঝা-ওর সাথে কিভাবে আসছো
মেয়েটি- ওকে আমার পছন্দ হয়েছে তাই।
ওঝা-ছেড়ে দে
মেয়েটি- যাবো কিছু দিতে হবে
ওঝা-পশ্চিম দিকের গাছের ডাল নিয়ে যা।
হঠাৎ মেয়েটি বেহুঁশ হলো কোন কথা নেই।
ওঝা বলল-
এখান থেকে সবাই বের হয়ে যান।
সবাই চলে গেল ওঝা বলল-
তারাতাড়ি ঘরের কপাট দে। রেজা দুয়ার দিল। ওঝা-এসে মেয়েটির শরীরে স্পর্শ করলো।
দুই ভাই শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ওঝা ছেড়ে দিয়ে বললো ঔষুধ দিয়েছি জ্ঞান ফিরবে।
একটু পরে হুঁশ হলো সুন্দর করে কথা বলছে ঘরে নিয়ে গেল।
দশ হাজার টাকা কত ভালো খাবার দিয়ে বিদায় দিল।

দুই ভাই সারা দিন খেয়ে দেয়ে রাতে বাসায় আসলো।
রাতে শুধু ভাবছে জ্বীন ছাড়ানো নামে গুরু শুধু মজা করে। মজা আর টাকা দু'টোই হবে এবার কেউ ঠেকাতে পারবে না।
আমরা যখন গুরু হবো ভেবেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।
প্রায় এক মাস হলে গেল গুরু বলল-
আমার সাথে তো অনেক দিন আছো, এখন বাস্তব অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে।
রেজা রানা আনন্দে সাথে বলল-
গুরু আমরা প্রস্তুত আছি, কোন সমস্যা হবে না।
গুরু:-
ঠিক আছে এর পর তোমাদের আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে কিন্তু।
কিন্তু সবাধান আমি যতটুকু বলবো তার বেশি কিছু করতে চাবি না।
দুই ভাই - আমরা প্রস্তুত আছি।
গুরু:- কালকে আমি আর মজনু কাঠালিয়া যাবো।
তোরা দুজনে লবণ গোলা যাবি।
একটা মেয়ে কে গোসল করতে হবে।
ঠিক মতো সব কিছু করবি আবার খারাপ কিছু করবি না।
তাহলে নতুন মানুষ সমস্যা হবে। বিপদে পড়লে ধুপের সাথে ঔষুধ দিস ।
রেজা:- আপনি চিন্তা করবেন না,সব কিছু ঠিক থাকবে।

বিকেলে দুই ভাই রুগীর গোসল করাতে গেলো। রানা বলে আমি করাই রেজা বলে না তুই পারবি না। সমস্যা হলে কি করবি গণধোলাই খেতে হবে।
চার পাশে পর্দা দিয়ে রেজা গোসল করাচ্ছেন।
রুগীর মাথা পানি দিয়ে মন্ত পাঠ করছে। রানা বেহুঁশ করানো ধুপ জ্বলিয়ে দিল। কিন্তু মেয়েটি পুরো বেহুঁশ হলো না । গোসল শেষে হলে মেয়েটি সবাই কে বলে গোসলের নামে গায়ে হাত দিসে। মেয়ের জাম্বু টাইপের ভাই, চাচা গ্রামবাসী সবাই মিলে গণধোলাই দিতে শুরু করলো।
দুই ভাই বলে এখনো দৌড় দাওনা আগে জীবন বাঁচা।
অন্ধকারে রাতে দৌড়ে দুই ভাই কোন রকমে রাস্তায় আসলো।
মাথা ফুলে গেছে হাত পা ফুলে আছে, দৌড়ের সময় পা কেটে গেছে।
দুজনে কোন রকমে পালিয়ে বাড়িতে আসলো।

{ এটা অনেক মজার হবে, পড়তে চাইলে ফলো করে next part কমেন্টে লেখুন। কমপক্ষে দশটা কমেন্ট চাই। প্লিজ সাপোর্ট,,,,

ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন তাহলে Next part দিবো। }
574 Views
27 Likes
12 Comments
4.2 Rating
Rate this: