রোমান্টিক হুজুর পর্ব ৫

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মেহেদী:- সবাই ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।
বলে মেহেদী বেলকনিতে চলে গেল।
রফিক , রনি, রাকিব সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।
মেহেদীর কিছু ভাল লাগছে না,বার বার রিয়া*র মিষ্টি মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কতো আদর যত্ন করতাম তোকে। কতটা ভালবাসতাম কেন বুঝলি না আমাকে? হায়রে জীবন কেন এতো নিষ্ঠুর?রাত প্রায় শেষ মেহেদী রুমে আসলো।

**@@**@@**

রিয়ার মনটা খারাপ রিমা গতকাল ফোন করে বলল মা অসুস্থ । কাজের মহিলা ঠিক মতো আসে না।একটু ফোন করে দেখা উচিত, কিন্তু ফোনটা কোথায়? মায়া ব‌ইয়ে ভিতরে ফোন লুকিয়ে গেইমস খেলছে।
রিয়া:- মায়া কি করো?
মায়া:-আম্মু হোম ওয়ার্ক করছি।
রিয়া:- ফোনটা কোথায়?
মায়া:- আমি জানি না।
রিয়া:- তোকে বলছি না পড়তে বসলে ফোন ধরবি না?তোর নানীর সাথে কথা বলবো দে?
মায়া:- মা তুমি কি বোকা? অসুস্থ মানুষ এখন একটু ঘুমাতে দিবা তো? পড়ে ফোন করলে দোষ কি?
রিয়া বুঝতে পারল ফোন মায়ার কাছে। একটা লাঠি নিয়ে আসলো বলল-ফোন বের কর?
মায়া:- ফোনটা বের করে বললো-
তুমি বললেই তো দিতাম?লাঠির দরকার ছিল না।
রিয়া মোবাইল নিতে নিতে বলল- লাঠিটা অনেক সুন্দর তাই নিয়ে আসলাম।

শোন তোর ইস্কুলে যেতে হবে আমি ছুটি নিয়ে আসবো। আমি না আসা পর্যন্ত ঘরে বসে টিভি দেখবি। কোন দুষ্টুমি করবি না।
মায়া:- আম্মু তুমি নানী বাড়িতে যাবা।
রিয়া:- তোর নানী অসুস্থ দেখা উচিত তো।
কারো সাথে মারামারি করবি না মনে থাকে যেন।
মায়া:- ঠিক আছে মা, তুমি যাও তো

রিয়া শহরে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় চাকরি করে।
ওই ইস্কুলে মায়া ক্লাস ফাইভে পড়ে।
ছুটি নিয়ে বাড়ি আসলো। মায়া আর পাশের বাসার এনি লুডু খেলছে।
রিয়া বলল- মায়া আমি বলছি না দুষ্টুমি করবি না?
মায়া:-আম্মু আমি তো ঘরে বসে লুডু খেলি।
করিম ভাইয়ের আম চুরি করছো কেন?
রুবিনার টাকা নিছো কেন? বল?
মায়া:- মা নিচে আম পড়ছে এই গুলা আনছি। এনি কে জিজ্ঞেস করো।
রিয়া:-রুবিনার টাকা নিছো কেন?
মায়া:-আমার কোন দোষ নাই টাকা হাতের মুঠোয় লুকিয়ে, বলছে কত টাকা বলতে পারলে দিয়ে দিবে।
আমি বলতে পারছি তাই টাকা নিছি।
রিয়া:- ঠিক আছে,এখন করিম ভাইয়ের কাছে মাফ চেয়ে আয়। না হলে আমি একাই তোর নানী বাড়িতে যাবো।
মায়া:- ঠিক আছে বলে দিল দৌড়।

মনির চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর কাজের মেয়ে ছকিনা সব কিছু করে।আর মাঝে মাঝে রিয়া, রিমা আসে। চাষের জমি টাকার বিনিময়ে চাষিদের কে দিয়েছে।
চেয়ারম্যান এর স্ত্রী সালেয়া খাতুন একাই এতো বড় বাড়িতে থাকে। বৃদ্ধ হলেও ভয় বলতে কিছুই নেই। কিন্তু আজকে তিন দিন হলো সালেয়ার শরীর খারাপ।
শুয়ে শুয়ে কাজের মেয়ে ছকিনা কে ধমক দিয়ে বললো-
এতো বেলা হয় কেন আসতে?
ছকিনা:- আম্মা পোলার জ্বর তাই দেরি হইছে।
সালেয়া:-ঠিক আছে খালি অজুহাত।

রিয়ার আসতে দুপুরে হয়ে গেল।
সালেয়া রিমা কেও আসতে বললো।
সালেয়া নাতনি মায়া*র দিয়ে তাকিয়ে আছে।
মায়া দেখতে মায়ের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দরী। দেখলে মনে হয় একটুকরো চাঁদ। মায়ার মিষ্টি কন্ঠস্বর, লম্বা চুল।চোখ,গাল মায়ের মতো।নাক বাবার মতো।
সালেয়ার চোখ দিয়ে জল পড়লো যদি আজ আমার জামাই বেঁচে থাকতো?
কি হতভাগা, মেয়ের মুখটাও দেখতে পাড়লো না।ব‌উয়ে কষ্ট কেন তোর সবাই কে ছেড়ে আত্মহত্যা করতে হবে?
মায়া চোখের জল দেখে বলল-নানী তুমি কান্না করছো কেন?
সালেয়া:-আনন্দে কাঁদছি ও তুমি বুঝবা না।
মায়া:-নানীআপু আমি ঘুরে আসি তোমার সাথে পড়ে কথা বলবো।
সালেয়া:-মায়া তোমাকে অনেক দিন পরে দেখলাম আমার কাছে একটু থাকো না?
মায়া:-আমার হাতে এখন সময় নাই পড়ে কথা বলবো।বলে দৌড়ে চলে গেল।

রিয়া মায়ের জন্য দধি নিয়ে আসলো,সালেয়া কে খাইয়ে দেয় আর বলে- মা!আমি মায়া কে নিয়ে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

সালেয়া:- কেন? আমার নতনীর মতো এতো মিষ্টি মেয়ে কোথায় নাই জানো?
রিয়া:- তোমার নাতনি আমার কলিজা টা জ্বলিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিসে। প্রতি দিন সবাই নালিশ করবে।এমন কোন দুষ্টুমি নাই যা করে না।
সালেয়া:-ছেলে মানুষ এই বয়সে একটু তো করবেই?
রিয়া:- এখনো ছেলে না কতো বড় হ‌ইছে , আসার সময় আম চুরি করছে। একটা মেয়েকে মেরে টাকা রেখে দিসে।এই মেয়েকে নিয়ে সব সময় ভয়ে থাকি জানি না কখন কি করবে।
সালেয়া:- কিছুটা বাবার মতো হয়েছে।বলে হঠাৎ থেমে গেল।

রিয়ার বুকের ভিতর টা কেঁপে উঠলো।ভাবছে শুধু মেহেদী কাছে নাই তাই মেয়ে কে কখনো মারে না। কারণ মায়া মাঝে মাঝে বাবার কথা ভেবে একা বসে থাকে। বাবার জন্য হয়তো অনেক কষ্ট পাচ্ছে।
রিয়ার গলা ভারি হয়ে আসলো। চোখের কোনে জল ভরে উঠলো।

রিয়া:-মা তুমি খাও আমার কাজ আছে বলে নিজেকে লুকিয়ে নিল।

সালেয়া বুঝতে পরলো রিয়া এখন মেহেদির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। এখনো তার অপেক্ষা করছে। সালেয়া নিশ্চিত যে মেহেদী আত্মহত্যা করছে। কিন্তু কিভাবে রিয়া কে বুঝাবে? এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি হবে? এতো অপেক্ষার পর যখন সত্যি জানবে মেহেদী বেঁচে নাই কিভাবে রিয়া নিজেকে সামলে নিবে? ভাবতে ভাবতে সালেয়া কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মেয়েটা জীবনে কিছু পেলো না। যেভাবে হোক ভাল একটা ছেলের সাথে রিয়ার আবার বিয়ে দিতে হবে। সারা জীবন এভাবে চলতে পারে না।
**00**00**
রেস্টুরেন্টে সবাই ঘুমে হঠাৎ চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচি। রফিক মেহেদী কে বলল-
ম্যানেজার তারাতাড়ি উঠুন। মেহেদী লাফিয়ে উঠলো -কি হয়েছে
রফিক:- 12 নং রুমে একটা বাঙালি ছিল আত্মহত্যা করছে।
মেহেদী:- তারাতাড়ি চল?

সবাই গিয়ে জানতে পারলো, লোকটার নাম সামিম। সৌদিতে আসছে ৯ বছর বাড়িতে বৃদ্ধ মা আর ব‌উ ছিল।ব‌উয়ের নামে টাকা ছিল,সব টাকা নিয়ে একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। প্রতি বছরই এভাবে দুই এক জন কষ্টে আত্মহত্যা করে।
মেহেদীর খুব বেশি কষ্ট লাগে সেই মানুষের কথা ভেবে,তার পরিবারের কথা ভেবে।

কিছু দিন ধরে মেহেদী মন খুব বেশি উতলা হয়ে আছে।কাজ-কর্ম কিছুই ভাল লাগছে না । মেহেদী ঠিক করছে আর দুই মাস পর বাড়িতে যাবো। মালিক কে বললো মালিক ছাড়তে রাজি না। কারণ সে অনেক বিসস্ত লোক, অনেক বছর নিজের পরিবারের মতো ছিল। মেহেদী ঠিক করছে মোট তিন জন বাঙ্গালী দেশে আসবে।

রহিম মাস্টার ও তার স্ত্রী বেয়াই বাড়িতে গেছে।অনুর বিয়ে হয়েছে অনেক বড় পরিবারে।ছেলে ব্যবসা করে।অনুর বড় মেয়ের বয়স পাঁচ বছর। এখন একটা চাদর মতো ফুটফুটে ছেলে হয়েছে।
তাই সবাই খুশিতে বাকুম বাকুম করছে।

রহিম মাস্টার বেয়াই বাড়ি খাটে বসে মেহেদির কথা ভাবছে।
তার চাদরের মতো সুন্দর ছেলেটা যখন পৃথিবীতে এসেছে, কতো আনন্দই করছে।তার বাবা গ্রামের মানুষ কে গরু খাইয়েছে। মেহেদী কে দেখে মনে হয়েছিল সাত রাজার ধন পেয়েছি।
আমার জন্য মা মরা ছেলেটা আজ কোথায় আছে? খেয়ে আছে না না খেয়ে পড়ে আছে?
কতটা কষ্ট পেয়ে বাড়ি ঘর ছেড়েছে, কিন্তু কখনো আমার দিকে তাকিয়ে একটা কথাও বলনি । আজকে ওর সুন্দর সংসার থাকতো, বাচ্চা থাকতো। আমার জন্য সব কিছু হয়েছে।
নিজেকে সব সময় খুব বেশি অপরাধী মনে হয়। রহিম মাস্টার মুখে কোন খাবার নিতে পারলো না।

সবাই আনন্দে আত্মহারা খুশিতে মজার মজার খাওয়া দাওয়া ধুম। রহিম মাস্টার বলে আমার ক্ষুধা নেই।
স্ত্রী রহিমা বেগম কাছে এসে বললো -
তোমার কি হয়েছে বলো? তুমি কি খুশি হয়নি?
স্বামী:-কেন হবো আমি অনেক খুশি তো হয়েছি।
স্ত্রী:- তাহলে কিছু খাওনা কেন।

অনু সম্পুর্ণ সুস্থ হয়নি কিন্তু বাবা না খেয়ে আছে, শুনে চলে আসলো। এসে দুয়ার এর কাছে দাঁড়িতে শুনছে..

স্বামী:- খাবার আমার গলা দিয়ে যায় না। কেমনে খাবো বলো?
স্ত্রী:-কি হয়ছে তোমার বলো?
স্বামী:-মেহেদীর কথা মনে পড়ছে।ও কেমন আছে? কোথায় আছে ?কিছুই তো জানি না। ওকে ছাড়া এতো ভালো খাবার কি করে খাবো বল?

রহিমা বেগম মনে মনে ভাবছে এখনো কি বেঁচে আছে? কবে যেন মারা গেছে। কিন্তু সেই কথা তো আর কাউকে বলা যাবে না।

স্ত্রী বলল-তুমি চিন্তা করো না, তোমার ছেলে এক দিন ঠিক চলে আসবে?
অনু চোখের জল ধরে রাখতে পাড়লো না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। বলল-
বাবা আর নিজেকে কষ্ট দিও না। কিছু খেয়ে নাও?

অনু মেহেদী কে প্রচন্ড ভালোবাসে। মেহেদী ছোট বেলা থেকেই অনু কে খুব ভালোবাসে।নিজ হাতে কতো খাইয়ে দিছে। কখনো অনু কে ছেড়ে কিছু একা খায়নি।ওর সৎমা পছন্দ না করলেও কখনো অনু কে সৎবোন ভাবেনি।
রহিমা বেগম বাবা মেয়ের ন্যাকামো দেখে কিছুটা বিরক্ত।

রহিম মাস্টার বলল-
অনু কে,মা যখন তোর ভাই ছোট ছিল সারা বাড়িতে হাটতো, মনে হতো আকাশে চাঁদ আমার ঘরে উঠানে দৌড়াদৌড়ি করে। আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরতো । পকেটে হাত দিয়ে বলতো বাবা মজা আনছো। কখনো কেউ কিছু দিলে লুকিয়ে পকেটে নিয়ে আসতাম।
মেহেদী সে গুলো পেয়ে অনেক খুশি হতো।
যখন ওর মা মারা গেলো তখন মায়ের লাশের পাশে বসে অনেক কেঁদেছে।ওর মা কে নিয়ে যেতে দিবে না।সে দিন বুকের সাথে জড়িয়ে বলেছিলাম কখনো তোকে কষ্ট পেতে দিব না।

বলে চোখ মুছে ঢোক গিলে একটু থামলো

আবার বলে উঠলো আমি মা হারা ছেলেটাকে সারা জীবন কষ্ট‌ই দিলাম।তোর মা*কে যখন নিয়ে আসি। বলে আমার ছেলে ঘরে থাকলে, আমার সাথে থাকবে না। সেই ছোট বেলায় মাদ্রাসায় দিয়ে আসেছি। কখনো দেখতে চাইলে যেতে পারিনি।

রহিমা বেগম জ্বলে উঠলো বলল-
আমি কি তোমাকে হাত পা বেঁধে রাখছি। তোমার ছেলে তুমি দেখবা না কি করবে তোমার বিষয়ে।
আমি কি কম কষ্ট করছি? তোমার সংসারে পিছনে আমার জীবন শেষ করে দিলাম।আর বিনিময়ে কি দিসো? বলেই চলে গেল..
*00**00**
সালেয়া রিয়া কে বললো আমি তোকে একটা কথা বলবো,না করতে পারবি না।
রিয়া বুঝতে পারল কি বলতে চায়,তাই বলল-
মা পড়ে শুনবো। এখন আমার কাজ আছে।
সালেয়া:-চেচিয়ে বললো এক পাও সামনে দিবি না। আমি আগামী মাসের মধ্যেই তোর বিয়ে দিতে চাই। যদি রাজি না হ‌ও আমার মরা মুখ দেখবি।

রিয়া মায়ের কথা শুনে চোখে জল এসে গেল। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল-
মা আমি তোমার বোঝা হয়ে গেছি? নাকি শত্রু হয়ে গেছি?
সালেয়া:- কঠিন গলায় বললো হ্যা তুই বোঝা হয়ে গেছো। আমি মা আমার কাজ আমাকে করতে দে।
কালকে একটা লোক আসবে তোকে দেখতে। আমি কোন কথা বা ঝামেলা শুনতে চাই না।

রিয়া উঠানের একপাশে একটা চেয়ার দিয়ে বসে বসে মেহেদির কথা ভাবছে।
চোখ দিয়ে জল পড়ছে যদি মেহেদী কখনো ফিরে আসে? তখন কি জবাব দেবো?
আমি তো সারা জীবন শুধু তাকে কষ্ট দিলাম। কখনো ভালোবাসা কপালে জোটে নি।
হয়তো তোমার কপালে কখনো সুখ নেই?
না হয় তোমার আমার ভাগ্য এমনটাই লেখা ছিল।
ভেবে নিও চলার পথে তোমার জীবনের একটা অধ্যায় ছিলাম আমি। যেটা শুধু অপমান,বিরহ আর অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ছিল।
যে বিরহের লেলিহান শিখা সারাটা জীবন হৃদয়ে কুটিরে পুষে রাখতে হবে। যদি কখনো আবার দেখা হয়, তোমার সামনে দাঁড়ানো মুখ আমার থাকবে না। সারা জীবন আমি শুধু তোমার কাছে হেরেই গেলাম। হয়তো কখনো ভালোবাসলে জেতা যায় না।
যদি কখনো তুমি ফিরে আসো আমাকে মাফ করে দিও। যদি কখনো দেখা হয় আকুল হয়ে না হয় শেষ বারের মত তাকিও। যদি ঘৃণা হয় তবুও শুধু শেষ বারের মত বলিও আমি তোমাকে আজো ভালোবাসি।
আমি জানি কখনো ক্ষমা পাওয়ার যগ্য আমি ন‌ই।
তোমার কাছে তোমার মেয়ে কে গোপন করেছি।
কখনো তাকেও দেখতে পারনি।সব কিছু জন্য আমি দায়ী। মেয়েকে ভালোবাসা অধিকার টুকু দিতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিও অনেক বছর তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। এখন মায়ের কথা রাখা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই।

মায়া এসে আম্মু বলে ডাক দিল। হঠাৎ রিয়া লাফিয়ে উঠলো তাকিয়ে দেখলো মায়া।
মায়া দেখলো মায়ের চোখে জল।
মায়া বলল-
মা তুমি কান্না করছো কেন?
রিয়া মায়া কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো।
মা আমি কাঁদছি না, আমার কিছু হয়নি।
মায়া চোখের জল মুছে দিয়ে বলল-
মা তুমি কখনো কাঁদবে না। তুমি এখন বাচ্চা না যে কাঁদবে।
একটু থেমে বললো - তুমি কি বাবা কে মিস করছো?
রিয়া:- না, তোর এতো বুঝতে হবে না বলে ঘরে চলে গেল।
মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে চলে গেল কেন?

রিমা বাচ্চাদের নিয়ে আসলো, তার স্বামী আসেনি।
মায়া খালাতো ভাই বোন পেয়ে অনেক বেশি খুশি।
ভোরে রিয়া কে সাজিয়ে দিল ছেলে পক্ষের লোক দেখতে আসবে।
ছেলে ছোট একটা চাকরি করে ব‌উ মারা গেছে, তাই বিয়ে করা খুব জরুরি।
পুরুষ মানুষ তো ব‌উ মারা যাওয়ার সাথে সাথে বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে।
বড় সংসার ব‌উ ছাড়া একদিনও চলে না আরো কত কি।
অভুক্ত বাঘের সামনে নর মাংসের ঘ্রাণ পেলে, নিজেকে সামলানোর কঠিন।

মেয়ে অনেক সুন্দরী, স্লীম বডি, দেখলে মনে হয় নতুন বিয়ে হয়েছে। সরকারি চাকরি আছে, একটা মেয়ে আছে কিন্তু এটা তেমন সমস্যা না।
দেখার সাথে সাথে পছন্দ হয়ে গেল।
এতো সুন্দরী, তার পর চাকরি করে ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।
ছেলে পক্ষ পনেরো দিন পর বিয়ে ঠিক করলো।

সালেয়া ঘরে বসে বললো মায়া আমার সাথে থাকবে। ও তো বড় হয়েছে না নিলে সমস্যা নাই।

মায়া কথাটা শুনে মুখ গোমড়া বসে আছে।
মনে মনে ভাবছে ওর মা নতুন একটা বিয়ে করে, শ্বশুর বাড়িতে চলে যাবে।
ওকে হয়তো নানীর বাড়িতে রেখে যাবে।
আমি অন্য একটা বেডা মানুষ কে বাবা ডাকতে পারবো না।
সে আমার বাবা নয়, আমার মা বলেছে বাবা বেঁচে আছে। ঠিক একদিন আমাকে নিতে আসবে।
সেদিন আমি বাবার সাথে যাবো আমি কাউকে চাই না।বাবা!? মা যদি চলে যায় তুমি আমাকে এসে নিয়ে যেও?

রিয়া দেখলো মায়া বসে আছে চোখের কোনে জল জমেছে। রিয়া বলল-
কি মা তুই এভাবে বসে আছিস কেন?
মায়া মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার নিচে চেয়ে এক ফোটা জল ছেড়ে দিলো। কিছু বললো না
রিয়া দুই হাতে গাল ধরে মাথা উপরে তুলে দেখলো,মায়ার চোখে জল।

রিয়া বলল-
কাঁদছো কেন বল?
মায়া বলল-তুমি আমাকে ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবা?
রিয়া মায়া কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো - আরে আমার বোকা মেয়ে! আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো না।
তুই তো আমার পরাণ তোকে ছাড়া আমি এক মিনিট বাঁচতে পারবো না।
মায়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
চোখের বাঁধ ভেঙে জোয়ার বইছে।
রিয়া এই প্রথম মায়ার কান্না দেখে অবাক হয়ে গেল।এই মেয়ে কখনো কাঁদে না আজ হঠাৎ এমন করে কান্না করছে কেন?
মনে হয় বাবা কে খুব মিস করছে।

রিয়া বলল-এই বোকা মেয়ে বলছি না কখনো তোকে ছেড়ে যাবো না।
আমি যেখানে যাবো তোকে সাথে করে নিয়ে যাবো। এখন আর কাঁদতে হবে না।

মায়া বলল- আমাকে রেখে গেলে আমিও বাবার মতো কোথায় চলে যাবো। আর কখনো ফিরে আসবো।
আমাকে কেউ খুঁজে পাবা না, তুমিও না বাবা আসলেও না।
বাবা খুব নিষ্ঠুর আমাকে এক বারো দেখতে আসলো না।
যদি আসে দেখে নিও আমি কখনো তার সাথে কথা বলবো না।
তুমি জানো প্রতিদিন রুবিনার বাবা ইস্কুল থেকে রুবিনা কে নিয়ে যায়।
কতো মজা কিনে দেয়, কোলে নিয়ে আদর করে।আমারো তখন বাবার কোলে চড়তে,হাত ধরে হাঁটতে। ইচ্ছে করে বাবার সাথে দুষ্টুমি করতে। তখন শুধু তাকিয়ে দেখি বাবারা কেমন হয়? কিভাবে বাবা রা কথা বলে, কিভাবে হাটে।
টাকা দেয় ফুচকা কিনে দেয়।
আর আমার বাবা কখনো আসলো না।
আমি কখনো তার সাথে কথা বলবো না দেখে নিও।

রিয়া চোখের জল ধরে রাখতে পাড়লো না।
মায়া কে বুকের সাথে শক্ত করে ধরে বাচ্চার মতো করে কেঁদে উঠলো। বলল-
মা আমাকে ক্ষমা করে দে সব কিছুর জন্য আমি দায়ী।
তোর বাবা তো জানেই না যে তুই তার মেয়ে।
আমি তাকে কখনো বলিনি তোর কথা।
জানলে কখনো তোকে ছেড়ে থাকতে পারতো না। তুই আমাকে মাফ করে দে মা।

সপ্তাহ খানেক পর মেহেদী হঠাৎ স্বপ্নে দেখলো। তার বাবা গাড়ি এক্সিডেন্ট অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
মেহেদী এমন স্বপ্ন দেখে খুব বেশি বিচলিত হয়ে পড়লো।
রাতে আর ঘুম হলো না। ভোরে উঠে মালিকের কাছে দৌড়ে গেল।
যে বাবা গাড়িতে এক্সিডেন্ট করেছে।এখনি বাড়িতে যেতে হবে।
সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লো বলল-
কিভাবে জানলি?
মেহেদী:- স্বপ্নে দেখেছি।
সবাই - আরে স্বপ্ন সত্যি হয় না। কিছু হবে না।
মেহেদী:- না আমি এখনি যাবো

রেস্টুরেন্টে এর মালিক কিছু খুশবো আর তিনটি সিলোয়ার কামিজ আর একটা পাঞ্জাবি দিলো।
খুশি হয়ে কিছু দিনার দিল,বললো যদি আবার আসতে চাও পরিবার সহ আসতে পারো।

মেহেদী সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসলো।এক সাথে অনেক বছর পরিবারের মতো ছিল।কেউ কেউ কেঁদে ফেললো বলল-
দোয়া করবেন আমরাও যে ভাবে পরিবারে ফিরে যেতে পারি।
সবাই কিছু উপহার হিসেবে কেউ খেজুর কেউ তাসবিহ,কেউ জায়নামাজ কিনে দিল।
মেহেদী দুটো লাল শাড়ি আর মা বোন আর রিয়ার জন্য কানের দুল ক্রায় করলো ।আর এক জোড়া গলার চেইন। বাবার জন্য ঘড়ি কিনলো।

মায়ার ফাইভে ফাইনাল পরীক্ষা সামনে।
তাই তারাতাড়ি বিয়ের ঝামেলা শেষ করতে চায়। সবাই ব্যস্ত কেনাকাটা বাড়ি সাজানো।
ছেলের বোন এসে দেখে রিয়া কে হাতে আংটি পরিয়ে দিল।
তারাও দেরি করতে চায় না।ছেলে তো মেয়ে দেখে নেয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে।
হাত ছাড়া করতে চায় না যদি কেউ বিয়ে ভেঙে দেয়।

রহিম মাস্টার বাড়িতে একটা মহিলা ভিক্ষা করতে আসছে।সে বলল-
এ দিকে নাকি রহিম মাস্টার বাড়ি কোন টা।
তার স্ত্রী রহিমা বেগম বলল-
কেন? রহিম মাস্টার বাড়ি দিয়ে কি করবেন?
ভিক্ষুক:- তার একটা পোলা আছে না?
যে পোলা ব‌উর শোগে ম‌ইরা গেছে। ঐ মাইয়া আজকে মনে হয় বিয়া।

রহিমা বেগম কোন কথা না বলে চুপ করে তাকিয়ে রইল। তার পর বললো-
তুমি জানো কেমনে?
ভিক্ষুক:- বাড়িতে অনেক মানু গেট হাজাইছে।
হ্যার পর সবাই কয় রিয়া ম্যাডামের বিয়া হ‌ইবে।

রহিমা একটা দিঘ্য নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘরে চলে গেল।
বলল হায়রে কপাল যার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।

মহিলা চলে গেল, রহিমা তার স্বামী কে বলল- আজকে রিয়ার বিয়ে, খবর টা শুনে রহিম মাস্টার বুকটা কেঁপে উঠলো।
এই মেয়ের জন্য তার ছেলে হাড়িয়ে গেছে।
এখন সেও চলে যায় কার মাঝে ছেলের স্মৃতি খুঁজবে। যদি আজ মেহেদী থাকতো?

মেহেদী দেশে এসে সরাসরি বাড়িতে আসলো। সুন্দর চেহারা গরমে লাল হয়ে আছে।
দাঁড়ি একটু ছোট ছোট, কালো রং এর পাঞ্জাবি আর প্যান্টি পড়া। রহিম মাস্টার বাড়ান্দায় চেয়ারে বসে আছে।
তার স্ত্রী হাত পাখা বানাতে ব্যস্ত আছে।
মেহেদী ভিতরে ঢুকতে তার মা আড়ালে লুকিয়ে বলল-
আপনার বাড়ি কোথায় এভাবে ঘরে উঠলেন কেন?
মেহেদী:- মা আমি মেহেদী। বাবা কোথায়?
অনু কোথায়?
রহিম মাস্টার গলা শুনেই বলল-
মেহেদী বাবা তুই?

তাড়াতাড়ি দৌড়ে আসতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা লাগছে।

মেহেদী বাবা কে জড়িয়ে ধরে বললো -
বাবা আমাকে মাফ করে দাও?
আর কখনো তোমাদের ছেড়ে যাবো না।
রহিম মাস্টার আবেগে কাঁপছে ঢোক গিলে কেঁদে ফেললো বললো-
বাবা তুই আমাকে মাফ করে দিস। আমার জন্য তোর এই অবস্থা।
মেহেদী:- দূর বাবা আমি একদম ঠিক আছি।
শুধু শুধু চিন্তা করতে হবে না।

পাড়া প্রতিবেশী সবাই খবর পেয়ে আসলো।
সবাই বলাবলি করতে লাগল রহিম মাস্টার এর ছেলে বেঁচে আছে। বাড়িতে আসছে।
অনেক মুরুব্বি আবেগে কেঁদে ফেললো বলল-
বাবা আল্লাহ তোকে ভাল রাখুক।
তোকে সুখী করুক।

অনু কে ফোন দিল,অনু সাথে সাথে তৈরি হয়ে আসতে শুরু করছে। সবাই কে খেজুর দিল, পোশাক বের করে দিল। দুটো শাড়ি দেখে বলল-
অনুর জন্য বুঝি?
মেহেদী বলল-একটা অনুর অন্য টা রিয়ার।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না।
রিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে এটা শুনলে হয়তো মেহেদী খুব কষ্ট পাবে।
তাই কেউ কিছু বললো না। রহিম মাস্টার ছেলের পাগলামি দেখে চোখে পানি এসে গেল।
যদি শুনে রিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে তখন কি করবে?
এতো বছর পরও ওর জন্য অপেক্ষা করছে পোশাক কিনে আনছে
।কিভাবে তাকে বলবে রিয়া কে ভুলে যা। বলল-
দেখ বাবা রিয়া -টিয়া বাদ দে?
তোকে অনেক সুন্দর একটা মেয়ে এনে দিব।
মেহেদী:- বাবা রিয়া তো আমার স্ত্রী।
তুমি দেখে নিও রিয়া খুব ভালো হয়ে গেছে।
বাবা:- দেখ তুই কাউকে তো কিছু বলে যাওনি। কেন শুধু শুধু তোর অপেক্ষা করবে?
সবাই ভাবছে তুই বেঁচে নাই।এই অবস্থা তোর জন্য কেউ অপেক্ষা করবে না।
মেহেদী:- তুমি দেখেনিও রিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করবে। কারণ ও আমাকে ভালোবাসে।
আর যদি অপেক্ষা না করে তবে আমিও বিয়ে করে ফেলবো ঠিক আছে। বলে চলে গেল..

মেহেদী বাজার করলো তারপর আগের সিম কার্ড তুললো।অনু ছেলে মেয়ে জন্য পোশাক কিনলো।

অনু ঘরে বসে আছে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। মেহেদী আসতে ভাইয়া বলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মেহেদী থাম তো এতো ব্যস্ত হতে হবে না। ভাই তুমি কেন আগে আসলে না? কেন কখনো ফোন করনি? কেন তুমি আমাদের ভুলে গেলে? হাজারো প্রশ্ন আর কত কথা। মেহেদী মুখ চেপে ধরে বললো-
থাম আমি এখন আসছি তো।
এতো বিরক্ত করলে আবার চলে যাবো কিন্তু।
অনু:- কিল দিয়ে বললো শয়তান তোকে আর যেতে দিলে তো।
মেহেদী:- পালিয়ে যাবো?
অনু:- এতো সহজ তুমি আমাকে চিনো না পা ভেঙ্গে দিব।
মেহেদী:- আচ্ছা ঠিক আছে, শুধু তোর ভাবী কে আনতে যাবো।
অনু মুখ মলিন হয়ে গেল, মেহেদির দিকে তাকিয়ে বলল-
ভাইয়া তুই এখনো রিয়া কে ভালোবেসো?
মেহেদী:- কেন? নিষেধ আছে নাকি?
অনুর চোখে জল এসে গেল বলল-
ভাইয়া অনুর তো বিয়ে হয়েছে। একটা ভিক্ষারী মহিলা বলছে।
মেহেদী:- দূর বাদ দে ভিক্ষুকে কি জানে।
তোর ভাবী আমাকে ছাড়া জীবনে কাউকে বিয়ে করবে না।

রিয়া ব‌উ সেজে বসে আছে,বর পক্ষের লোক এসে গেছে।
রিয়া ভাবছে মায়ার কথাগুলো যদি সত্যি হয়। যদি তার মেয়ে কে নিতে না দেয়? যদি মায়ার কষ্ট হয়?
মায়া কে ছাড়া তো আমি কখনোই থাকতে পারবো না।
পুরুষ মানুষ কে কিভাবে বিশ্বাস করবো।
এখন কি করবো?
কিছুই বুঝতে পারছি না। যদি মেহেদী চলে আসে? যদি জানতে পারে আমি তাকে ছেড়ে চলে গেছি তখন কি হবে?
আমি তো মেহেদী কে ভুলে থাকতে পারবো না। তাহলে কেন এই মিথ্যা অভিনয় করছি?
মেহেদী বলেছিল আমাকে তার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে।
আমি তার ভালোবাসার প্রতিদান এভাবে দিতে পারি না।
কি করবো আত্মহত্যা করবো?
তাহলে মায়ার কি হবে? বাবা সেও নাই আমিও যদি চলে যাই।
না এমন টা হতে পারে না।
হঠাৎ রিয়ার মায়ার কথাগুলো মনে পড়ছে।
"তুমি চলে গেলে আমিও বাবার মতো দূরে চলে যাব কেউ খুঁজে পাবা না"
রিয়ার বুকটা কেঁপে উঠলো বলল-
না আমি মায়া কে হাড়াতে পারবো না। কখনো না। রিয়া মায়া মায়া বলে চিৎকার দিল।

মায়া:- তাড়াতাড়ি এসে বলল- আম্মু কি হয়েছে তোমার?
রিয়া এক ঝটকায় মায়া কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো। আমি তোমাকে হাড়াতে পারবো না।
মায়া:- আমি তো তোমার সামনে আছি?
এভাবে করছো কেন?

মেহেদীর কানে অনুর কথা বেজে উঠলো।" ভিক্ষুক বলছে অনু বিয়ে করছে" শুনে বুকের ভিতরটা তোল পাড় হয়ে যাচ্ছে।
সত্যি কি আমি রিয়া কে হাড়িয়ে ফেললাম। আবারো ভুল করলাম মনে হয়।
যার জন্য সারা জীবন আফসোস করতে হবে।
একটা কল দিয়ে দেখি আগের নাম্বার আছে কিনা।

ফোনে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না..
দূর মনে হয় নতুন সিম চালায়
আবারো কল দিল... হঠাৎ রিং বেজে উঠলো।
মনে হচ্ছে মেহেদি নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

ফোনে রিং হতেই মায়া ধরে বললো কে আপনি?
মেহেদী:- আমি মেহেদী। রিয়া আছে?
মায়া:- আংকেল সে তো পুকুর পাড়ে গেছে ।
মেহেদী:-তোমার নাম কি?
মায়া:- আমার নাম মায়া।
মেহেদী:-রিয়া আসলে কল দিতে বলিস
মায়: ঠিক আছে।
একটু পরে রিয়া আসলো ফোনটা দিয়ে বললো আম্মু তোমার সাথে কথা বলবে।
রিয়া:- কে বলবে?
মায়া :- নাম বলছে মেহেদী।
রিয়া কারেন্ট গতিতে ফোনটা ধরে বললো- হ্যা,হ্যা হ্যালো! মেহেদী! হ্যালো! কোন উত্তর নাই

মেহেদী ফোনটা কেটে দিলো। রিয়া বিয়ে করছে নতুন সংসার করছে। ভালো আমি শুধু শুধু তার জন্য অপেক্ষা করছি। কেন নাম বলতে গেলাম?
তার নতুন সংসারে অশান্তির হয় যদি।
রাগে কষ্টে ফোনটা আছাড় দিল। ফোনটা আর অন হচ্ছে না তাই চুপ চাপ বসে ভাবছে রিয়ার কথা।

রিয়ার আনন্দে কেঁদে ফেললো মায়া কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো। মায়া মেহেদী ফোন করছে।যার জন্য আমি এতো বছর অপেক্ষা করেছি। নিজেকে এই বলে শান্তনা দিয়েছি যে সে আসবে। মায়া বুঝতে পারলো এটাই তার বাবা।
বার বার কল দিল বাবা দয়া করে ফোনটা ধর না।
ফোন বন্ধ কল যায় না, রিয়া চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গেল মায়ের কাছে।

রিয়া -মা মেহেদী ফোন করছে, মায়া*র সাথে কথা বলছে।
সালেয়া:- মুখ চেপে ধরে বললো-চুপ কর বর পক্ষের লোকে শুনতে পারবে। ফোন করে করুন চুপচাপ বিয়েটা করে নে।
রিয়া মা বলে তাকিয়ে আছে, বলল- তুমি কি বলছো? তোমার মাথা ঠিক আছে?
সালেয়া:- আমার মাথা ঠিক আছে। তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
রিয়া:- আমি মায়া কে বাবার থেকে আলাদা করতে পারবো না।
সালেয়া:- যদি তোকে না নেয়? তখন কি করবি?
রিয়া:-আমি সারা জীবন একা থাকলেও বাবা মেয়ে কে আলাদা করতে পারবো না। আমি বিয়ে করবো না এটাই শেষ কথা।

বিয়ের সময় হয়ে গেছে কাজী এসে হাজির।
রিয়া শাড়ি চুড়ি খুলে বসে আছে,কেউ কোন কথা বলছে না। রিমা বলল -
দেখ যা হবার হয়ে গেছে এমন কিছু করার নাই বিয়েটা করে নে।
রিয়া:-আমি মেহেদির সাথে কথা বলতে চাই।ওর কথা ছাড়া বিয়ে বসতে পারবো না।
রিমা:- পড়ে কথা বলিস এখন বিয়েটা হয়ে যাক।
সালেয়া বলল- আজকে যদি এই ছেলে পক্ষ গ্রামের মানুষ সবাই অপমান করে যায়
সালেয়া বলল- আজকে যদি এই ছেলে পক্ষ গ্রামের মানুষ সবাই অপমান করে যায় তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি বলে রাখলাম।
রিয়া:- আমাকে মাফ কর আমি বাবার কাছ থেকে মেয়ে আলাদা করতে পারবো না।

রিয়া ছেলে পক্ষের সবাই কে ডাকলো বলল- আপনারা কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলতে চাই। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পাত্রী আবার কি বলবে,
রিয়া বলল-
আমি বুঝিয়ে বলি তুই ঘরে যা
রিয়া:- কোন দরকার নেই আমি বলি। বললো আসলে এখন আমি বিয়েটা করতে পারবো না।

সবাই তো বলাবলি শুরু এই মেয়ে কি বলে? মনে হয় কোথাও কারো সাথে ইটিস-পিটিস চলছে।

ছেলের বোন চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো-
তুমি বললেই হবে।আমরা সব আয়োজন করছি, অনেক জিনিস কিনেছি এগুলোর দাম কে দিবে।
রিয়া:- আমি বুঝতে পারছি আপনাদের সমস্যা। কিন্তু আমি একজনের বিবাহিত স্ত্রী, আমার স্বামীর কোন খোঁজ ছিলনা। তাই সবাই বিয়ের আয়োজন করেছে কিন্তু সে এখন ফিরে এসেছে। আমাদের কোন তালাক হয়নি এই অবস্থা বিয়ে হবে না। শুধু কেচ-মামলা ঝামেলা হবে।তাই বলছি সে যেহেতু চলে আসছে আগে বিবাহ বিচ্ছেদ করি।তার পর না হয় বিয়ে হবে। এখন আপনারা যদি না বুঝতে চান কি করবো বলুন? অন্যের স্ত্রী থাকা অবস্থায় তো বিয়ে হবে না?

ছেলে পক্ষের লোক বলল- এ কথা আগে বলেনি কেন? আমরা অনেক খরচ করছি। আমাদের একটা মান-সম্মান আছে।
রিয়া:- দেখুন বিয়ের আসর থেকে তো কনে পালিয়ে যায় নি। আমি যা ভাল মনে করছি তাই বললাম। যদি মালমা হয় আমি কিন্তু আপনাদের পক্ষে কথা বলবো না। আমি বলবো আমি সব কিছু বলছি এবং আমার অমতে বিয়ে করছে।
এখন ভেবে দেখুন কি করবেন।

সবাই বলল- অন্যের স্ত্রী কে বিয়ে করতে পারবে না।
কারণ এখনো তালাক হয়নি তাই আগে তালাক দেয়া উচিত। কাজী বলল-
এই বিয়ে হবে না আমি বিয়ে করাতে পারবো না। আগে তালাক লাগবে, আর যদি বিয়ে করে হবে ধর্ষণ। এতে সবাই আসামি হবে।
চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লো সবাই হাসাহাসি করছে।
ছেলে পক্ষের সবাই গালি দিতে দিতে চলে গেল। রিয়া ঘর বসে আছে কেউ কথা বলছে না।

মেহেদী অস্থির হয়ে আছে রিয়ার সাথে একটু কথা বলার জন্য।
কি করে পারলো এভাবে? সে কি জানে না তাকে আমি কতটা ভালবাসি।
দশটা বছর তার জন্য অপেক্ষা করলাম এই দিনের জন্য।
আজ ওর আছে স্বামী আছে সংসার।
আমাকে এভাবে ভুলে গেল কেন?
কখনো কি আমাকে ভালোবাসে নি?
রিয়া সাথে একটু কথা বলতে হবে কি করে পারলো?

মেহেদী ঠিক করলো রিয়ার বাড়িতে যাবো।
যদি বিয়ে করে তাহলে দূর থেকে একটুখানি দেখে চলে আসবো।
আর যদি না করে তাহলে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বললো আমার ব‌উ কে আমি নিতে এসেছি।

মেহেদীর বুকটা চিন চিন করে ব্যাথা করছে। আজকে তুমি আমার কাছে থাকার কথা।
কিন্তু কি ভাগ্য আমার, আমার ব‌উ এখন অন্য কারো।
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে চোখ দিয়ে জল পড়ছে।
গলা শুকিয়ে কাঠ গেল, ঢোক গিলে
তোমাদের ছেড়ে আমি ভালো নেই।
প্রতিটা দিন আমার কষ্টে কেটেছে।
প্রতিটা রাত আমার তোমাকে ভেবে কেটেছে।
কত রাত কাটিয়েছি কেঁদে কেঁদে,তোমার বিরহে আমার হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছ গেছে।
তুমি কেন বুঝলে না তোমাকে কতটা ভালবাসি?
কি করে পারলে বিয়ে করতে? একটুও ভাবলে না আমার কথা। তুমি এতো নিষ্ঠুর পাষান্ড এক ফোঁটাও মায়া হলো না আমার জন্য?
আসলে তুমি আমাকে ভালবাস নি।
তাই ফোনটাও ধরলে না। ঠিক আছে তুমি যদি আমাকে ছাড়া সুখী হ‌ও বাদা দিব না।

মেহেদী রাতে একটা বাইসাইকেল নিয়ে চলে গেল।
পথে এক্সিডেন্ট করেছে হাত কেটে গেছে। পায়ে আঘাত লেগেছে তারপর চলে গেল।
দরজায় কোন মানুষ নেই বাড়িতে নিরব।
ঘরে কিছু ছেলে মেয়ে টিভি দেখছে, মেহেদী গিয়ে বলল-
ঘরে মানুষ আছে?
মায়া আর ওর খালাতো বোন তানিয়া আসলো।
মায়া বলল-শুধু আমি তানিয়া আর রানা আছি।
মেহেদী:- তোমার নাম কি?
মায়া:- আমি মায়া। আপনি কে?
তাকিয়ে দেখলো হাত কেটে গেছে সেখানে বেঁধে রাখছে। বলল-আপনার হাতে কি হয়েছে?
মেহেদী:-আসার সময় ব্যাথা পাইছি। সবাই কোথায় গেছে?
মায়া:- ছকিনা খালার ছেলে অসুস্থ তাই খালামণি, আম্মু আপু দেখতে গেছে।
মেহেদী:- তুমি কি রিয়া কে চিনো?
মায়া:- হাসি দিয়ে বললো না।
মেহেদী:-সত্যি করে বল তাহলে তোমাকে মজা দিব?
মায়া:- আগে মজা দাও তাহলে বলবো
মেহেদী:- তুমি তো অনেক দুষ্টু কিন্তু আমার কাছে মজা নাই টাকা দিলে হবে?
মায়া:- তাহলে একটু বেশি লাগবে?
মেহেদী একশো টাকার চারটি নোট দিয়ে বললো এখন বলো
মায়া:- রিয়া হলো আমার আম্মু।
মেহেদী কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
মনে মনে ভাবছে তাহলে রিয়া সত্যি বিয়ে করছে।
আমি শুধু শুধু ওর জন্য অপেক্ষা করছি। ঠিক আছে ভালো থেকো বিদায়।

মেহেদী চলে আসার পথে রাস্তায় ছকিনার স্বামী আর দোকান দার লিটন দেখে বলল- কেমন আছেন আপনি?
মেহেদী:-আলহামদুল্লিলাহ ভালো। আপনারা কেমন আছেন?
তারা - ভালো আছি। আপনার তো কোন খোঁজ খবর ছিল না।
মেহেদী:- একটুখানি বাহিরে গেছিলাম, আচ্ছা যাই।
তারা:- হাতে কি হয়েছে শ্বশুর বাড়িতে গেছিলাম?
মেহেদী:- এক্সিডেন্ট করছি, মামার বাড়িতে গেছিলাম। বলে চলে আসলো

ছকিনার স্বামী গিয়ে বললো আপনারা এখানে আর আপনাদের জামাই বাড়িতে দেখলাম।
রিমা বলল-কোন জামাই?
ছকিনার স্বামী - মেহেদীর সাথে দেখা হয়েছে। আপনাদের দরজার কাছে।

সবাই তারাতাড়ি ছুটে আসলো কিন্তু কেউ নেই।
রিয়া দৌড়ে ঘরে গেল কোথায় কেউ নেই।
তাহলে কি রিয়ার সমস্ত আশা ভরসা মিথ্যা হলো। মেহেদী নিতে আসেনি?এতো বছরের অপেক্ষা ভুল ছিল?আবারো ঠকতে হলো? কষ্টে রিয়ার চোখ দিয়ে জল পড়ছে। বসে বসে মায়ার কাছে সব কিছু শুনলো। মেহেদী এক্সিডেন্ট করেছে কি অবস্থা কেমন আছে? শুনে রিয়া অস্থির হয়ে উঠলো। কিন্তু কি করবে ওই বাড়িতে তো আর তার স্থান নেই।যার অপেক্ষায় ছিলাম সেও দেখা না করেই চলে গেল।

মেহেদীর টাকা রিয়া ফেলে দিয়ে বললো-
ওর টাকা ধরবি না। আমার সাথে একটু কথাও না বলে চলে গেল। মায়া বলল-
তুমি তো ছিলা না কিভাবে কথা বলবে।

রিয়া বাড়ান্দায় চেয়ারে গিয়ে একা বসে আছে।
ভাবছে মানুষটি এসেই চলে গেল তাহলে আসলো কেন? আমার প্রয়োজন থাকলে অপেক্ষা করত?
হয়তো খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছে তাই চলে গেছে।
ও কেমন আছে যদি বেশি ব্যথা পায়? আমার তো তাকে দেখতে যাওয়া। না ঠিক হবে না, আমাকে তো ঘর থেকে বের করে দিসে। কিভাবে সেখানে যাবো? কিন্তু আমি যে মেহেদী কে না দেখে থাকতে পারছি না।

মেহেদী চলে গেল রিয়া এভাবেই সারা জীবন ঠকিয়ে আসলো। কি দোষ ছিল আমার? মানছি আমারো ভুল ছিল সবাই কে না জানি যাওয়া।তাই বলে আমাকে এভাবে কষ্ট দিল? আমার ভালোবাসার কোন মূল্য নেই তার কাছে। সবাই নিষ্ঠুর পাষান্ড আমি কাউকে চাই না।

চোখের জল মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকলো।
সবাই দেখলো মেহেদীর হাত বাদ রক্তে লাল হয়ে গেছে শরীর।পা দিয়ে খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।
অনু চিৎকার দিয়ে বললো - ভাইয়া তোর কি হয়েছে?
সবাই চলে আসলো, মেহেদী বলল- আমি ঠিক আছি। একটুখানি এক্সিডেন্ট করেছি।
বাবা: - কার সাথে কিভাবে? কোথায় গেছি লি?
অনু ধরে ঘরে নিয়ে গেল বলল- ভাইয়া কোথায় গেছিলা?
মেহেদী:- রিয়ার কাছে।জানো অনু ও সত্যি বিয়ে করছে? ওর একটা মেয়ে আছে মায়া। ও আমাকে ভালোবাসে না। সত্যি আমাকে ভালবাসে না বলে বুকে একটা চড় দিল।
অনু হাতটা ধরে বললো ভাইয়া তুমি শান্ত হ‌ও ।
সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে?
মেহেদী:- কেঁদে কেঁদে বলল- কিছু ঠিক হবে না। কিছু না। ও খুব নিষ্ঠুর! কি করে পারলো আমাকে ছেড়ে যেতে? আমি তো ওকে ভালবাসি তাই না?
তুই বল? তাহলে কিভাবে পারলো আমাকে ভুলে যেতে? দেখে নিস আমিও ভুলে যাবো? বলে চোখের জল মুছলো অনু কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। এভাবে মেহেদী কে কখনো কান্না করতে দেখেনি। ভাইয়ের জন্য প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে সেই দিন সবাই জোর করে বিয়ে না করলে এতো কষ্ট পেতো না। আজকে জন্য সবাই দায়ী। মেহেদীর চোখ মুছে দিয়ে বলল-
ভাইয়া তুই কি ছোট বাচ্চা যে কাঁদো।
এভাবে বোকার মত করিস না।
মেহেদী:- আমি ঠিক আছি,আ আ আমার কোন কষ্ট নেই। আমি কাঁদবো কেন? ও যদি ভুলে যেতে পারে আমি ও পারবো না কেন? মেহেদী চুপচাপ টিনের বেড়াতে সাথে পিঠ দিয়ে বসে আছে।
সবাই যে যার মতো লুকিয়ে চোখের জল মুছতে আছে।

সারা রাত কোন খাবার খেল না ঔষুধ তাও খায় নি। শুধু ব্যাথা বিছানায় ছটফট করছে।
হাতে পায়ে খুব ব্যাথা করছে। ভোরে কিছু খেয়ে চাইছে না। জোর করে কিছু খাইয়ে ফার্মাসিতে নিয়ে ঔষুধ আনলো।
Next part finished
422 Views
11 Likes
1 Comments
4.9 Rating
Rate this: