আপনি কি জানেন আপনার চোখের ব্যবহার আপনাকে জান্নাতেও নিতে পারে, জাহান্নামেও নিতে পারে?
মানুষের অন্তরে ঈমানের নূর প্রবেশ করার একটি রাস্তা হলো চোখ। চোখ শরীরের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। চোখের জ্যোতি দ্বারা আমরা পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করি। সব কিছু দেখতে পাই। চোখে দেখে দৈনন্দিন কাজ কর্ম করি। আল্লাহ তায়ালার অনেক বড়ো একটি নিয়ামত হলো চোখ। এটা ছাড়া দুনিয়ার জীবন অন্ধকার।
আল্লাহ তায়ালা যেমন আমাদের কে চোখ দিয়েছেন ঠিক তেমনই এটার ব্যবহার করার সীমারেখাও দিয়েছেন। যখন চোখের দ্বারা গোনাহ করা হয় তখন ওই গোনাহর কারণে অন্তরের ঈমানের নূরানীয়াত কমে যায়। যতই চোখের গোনাহ হতে থাকবে ঈমান ততই কমতে থাকবে।
মানুষের দিল প্রথমে মর্মর পাথরের মতো মসৃন ও সুন্দর থাকে। মানুষ যখন গোনাহ করে তখন তার দিলে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। যদি গোনাহ চলতেই থাকে তাহলে কালো দাগ পড়ে পড়ে অন্তর একে বারে কালো হয়ে যায়। তখন ভালো আমল আর ভালো লাগবে না। নিজের মধ্যে একটা বেপরোয়া ভাব চলে আসবে। নফসের খাহেসাত অনুযায়ী চলবে।
বিনোদনের জন্য, নিজের ইচ্ছা আকাঙ্খা পূরণের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা টিভির সামনে বসে সিনেমা দেখা,অর্ধ নগ্ন মেয়ের এড দেখা আর যায় হোক না কেনো এগুলো জেনা। চোখের জেনা। যুব সমাজ যাকে "ক্রাশ " বলে এটা কে পর্দা ছাড়া দেখাও জেনা। ভাইয়েরা মনে রাখবেন চোখের জেনা আমল কে ধ্বংস করে দেয়। নামাজের" খুশু খুজু " নষ্ট করে দেয়। এমন কি সিজদাতে গিয়েও চোখের জেনা চোখের সামনে ভাসে। চোখের জেনা থেকে বাঁচুন। বেগানা মেয়েদের দেখা থেকে বাঁচুন।
গোনাহর মহলে গোনাহ করতে দেখেও সেটাকে গোনাহ মনে না করাটাও মস্ত বড়ো গোনাহ। মানুষের গোপন বিষয় দেখে সেটাকে লোকের সামনে বলে বেড়ানোটাও গোনাহ। অন্যের উন্নতি দেখে হিংসা করাটাও। এরকম হাজারো খারাবি আছে। এজন্য আমাদের কে এসব থেকে বাঁচতে হবে।
চোখের বেপরোয়া অপব্যবহারের কারণে আমলের নূর শেষ হয়ে যায়। আমল করবে কিন্তু ভালো লাগবে না। আমলের মজা নষ্ট হয়ে যাবে। চোখের গোনাহ বন্ধ না হলে এমন একটা সময় আসবে যখন আমল করতেই ভালো লাগবে না। দিল পুরো দুনিয়ামুখি হয়ে যাবে।
চোখ দিয়ে যে গোনাহর বস্তূ চোখে দেখা হয় সেটাই আপনাকে আকর্ষণ করবে। মনের মধ্যে পাওয়ার আকাঙ্খা, লালসা তৈরী হয়।
চোখ দিয়ে যেটা দেখা হয় তার প্রতিচ্ছবি মনে বসে যায়। ওটাই সারাক্ষণ মাথায় ঘুরতে থাকে। গোনাহ মানুষ যে আমল থেকে দূরে করে, আমল থেকে দূরে করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে চোখের গোনাহ থেকে বাঁচার তৌফিক দিন।
একবার ভেবে দেখুন তো চোখের ব্যবহার টা যদি নেকির রাস্তায় করা হয় তাহলে কেমন হয়।
আল্লাহ তায়ালার ভয়ে গোনাহ করা থেকে চোখ সরিয়ে নিলে আমলের মধ্যে এমন মজা পাওয়া যাবে যার সাথে দুনিয়ার কোনো কিছুর তুলনা হবে না।
আল্লাহ তায়ালা দিলে ঈমানের নূর দিবেন। প্রত্যেকটা আমলের তাসির চোখে দেখা যাবে। নামাজে মনোযোগ আসবে। নামাজের দ্বারা সমস্যা সমাধান করানো সম্ভব হবে।
ঈমানের পর কুফুরের দিকে ফিরে যাওয়া ওই রকম কঠিন ও কষ্টদায়ক যেমন আগুনে ফেললে হয়। মুমিনের প্রতিটি দৃষ্টি নেকির কারণ। সৃষ্টি কে দেখে স্রষ্টার কথা স্মরণ করা হলো জিকির। আল্লাহ তায়ালা আসমান বানিয়েছেন দেখুন, জীবকে দেখুন, বিভিন্ন মাখলুক দেখুন আর আল্লাহ তায়ালার কথা ভাবুন। ভেবে দেখুন তো আল্লাহ তায়ালা কত সুন্দর ভাবে এগুলো কে সৃষ্টি করেছেন। এই ভাবনা টা মনে চিন্তা করাটা জিকির।
মানুষের জন্য এক বিরাট রহমত হলো আল কুরআন। কুরআন দেখুন। পড়ুন। সেই চোখ কতোই না উত্তম যে চোখ কুরআন পড়ার সুযোগ পায়। কুরআন দুনিয়ার কোনো বস্তূ নয়। এটা আসমানী জিনিস, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে এসেছে। কুরআন পড়ুন। আসমানী নূর নিজের মধ্যে প্রবেশ করান। আল্লাহর নিকটবর্তী হয়ে যান। কুরআন পড়া আবজাল জিকির। দিনের শুরুতে যদি কোরআনের নূর সিনাতে প্রবেশ করানো যায় সেই নূর সারাদিন পুরো শরীর কে নূরানী রাখে।
আল্লাহ তায়ালা দুটি ফোটা খুবই পছন্দ করেন। এক আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে যে রক্ত ঝরে সেই রক্তের ফোটা। দ্বিতীয় টি হলো আল্লাহ ভয়ে বান্দার চোখ দিয়ে যে অশ্রু ফোটা বের হয় সেই অশ্রু ফোটা। আল্লাহ তায়ালা রহমানির রহিম, দয়ার সাগর। আল্লাহ তায়ালার রাগের চেয়ে রহমত, দয়া অনেক অনেক বেশি। বান্দা যখন গোনাহর কারণে অনুতপ্ত হয়ে রবের কাছে চোখের গরম অশ্রু ফেলে ক্ষমা ভিক্ষা চায় এটা দেখে আল্লাহ তায়ালা খুবই খুশি হন। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করা ভালোবাসেন।
আসল কথা হলো আমাদের সকল কেই রব কে সন্তুষ্ট করে জান্নাতে যেতে হবে। এর জন্য গোনাহ একেবারেই বাদ দিতে হবে। নিজের প্রতিটি মুহুর্ত, প্রতিটি অঙ্গ আল্লাহমুখী করতে হবে। জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতেই হবে। জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য যা করা দরকার তাই করতে হবে। দ্বিতীয় কোনো বিকল্পই তো নাই!!!
আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তৌফিক দিন।।
চোখের ব্যবহার
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
198
Views
10
Likes
1
Comments
5.0
Rating