মুক্তিযুদ্ধ ও ইসরায়েল

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তো অনেক কিছুই জানি,আজ না হয় ভিন্ন কিছু জানি

ইসরায়েল অর্থাৎ ইহুদিরা হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার মাস্টার মাইন্ড। সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,ব্যাংকিং সিস্টেম,মিডিয়া,বিনোদন ইত্যাদি সবই তাদের ইশারায় চলে। এদের এখন একটাই টার্গেট গ্রেটার ইসরায়েল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইসরাইলের ভূমিকা প্রসঙ্গে বর্ণনা এসেছে গবেষক, ইতিহাসবিদ মহিউদ্দিন আহমদের লেখনীতে।

মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে দুইটা বলয় ছিলো। সিরাজুল আলম খান এবং শেখ ফজলুল হক মনি ।
শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে শেখ ফজলুল হক মনির পক্ষাবলম্বন করেন। এরপরই মূলত সিরাজুল আলম খানের পক্ষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল স্রোতধারা থেকে হারিয়ে যায়। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাদের অবদানও হারিয়ে যায়।

মহিউদ্দিন আহমদ যখন বইটি লিখছেন তখন সিরাজুল আলম খান এবং তার পক্ষ রাজনীতিতে খুব অল্পই প্রাসঙ্গিক এবং যার বয়ানে এই আলাপ আসছে তিনি হচ্ছেন আমির হোসেন আমু ; বর্তমানে আওয়ামী লীগের মূলস্রোতেরই নেতা এবং ঐসময় ছিলেন মনির পক্ষের লোক। নিচের বক্তব্য পাঠকালে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।


"ওই দিন রাত একটার পর সিরাজুল আলম খান আমারে রুম থিকা নিয়া গেল। নর্দার্ন পার্কের মধ্যে বেঞ্চ। কয়, আমু সাব, নিশ্চয়ই আপনার কাছে কোনো ইনফরমেশন আছে। তা না হইলে আপনি এই স্ট্যান্ড নিলেন কেন। আপনি কী করে ঝুঁকি নিলেন যে আমরা যেখানে খুশি সেখানে যাব, যাদের খুশি তাদের হেল্প নেব। নিশ্চয়ই এর মধ্যে ব্যাপার আছে।

থাকতে পারে। আপনে কী কইতে চান, সেইটা বলেন।

আমার কাছে তো প্রস্তাব আছে। আমাদের ২০ হাজার ছেলেকে লিফট কইরা নিয়া যাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক ট্রেনিং আর অস্ত্রশস্ত্র দিয়া আমাদের পাঠায়া দিবে।

কারা?

ইসরায়েল।

আইজকা এইটা কইলাম। এইটা আমি কারোরে কই না। তহন থিকাই আমি জানি তার ইসরায়েলি লাইন। নাইলে ইসরায়েলের কথা কবে কেন?

মহি : আমার মনে হয় না। অনেকে অনেক সময় বাগাড়ম্বর করে না? ওনার কোনো ইন্টারন্যাশনাল লাইন-ফাইন ছিল বলে আমার মনে হয় না।

আমু : ছিল। ইন্টারন্যাশনাল লাইন না থাকলে…ইন্ডিয়ার লগে একটা লাইন তো তার ছিল।

মহি: সেইটা থাকতে পারে।[১৭]

একাত্তরের যুদ্ধে ইসরায়েল প্রসঙ্গ উঠেছিল। এ সময় ইসরায়েল সরকার ভারতের ডানপন্থী রাজনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা বাংলাদেশের কয়েকজন সাংসদের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিল। এটা জানতে পেরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদের একান্ত সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী সিপিআইএমের পত্রিকায় তথ্যটি জানিয়ে দেন। সংবাদটি ওই পত্রিকায় ছাপা হয়। এরপর ইসরায়েলি লবির তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়।[১৮]

ওই সময় ভারত অবশ্য ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র সহযোগিতা পেয়েছিল। ভারত তখন অস্ত্র জোগাড়ের জন্য মরিয়া। সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার মধ্যবর্তী ছোট্ট দেশ লিচেনস্টেইনে অবস্থিত অস্ত্র তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘সালগাদ’ ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র তৈরি ও জোগান দিত। পি এন হাকসার ১৯৬৫ সালে লন্ডনে ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার থাকাকালে সালগাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্লোমো জাবলুডোয়িচের সঙ্গে পরিচিত হন। হাকসারের অনুরোধে জাবলুডোয়িচ ৩ আগস্ট ১৯৭১ লন্ডনে ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার প্রকাশ কাউলের সঙ্গে দেখা করে ভারতে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন। তিনি ইরান ও তুরস্কের জন্য তৈরি অস্ত্রের চালান সরাসরি ভারতে পাঠিয়ে দেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মজুত থেকে কিছু অস্ত্র আকাশপথে ভারতে পাঠানো হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ড মেয়ার ইন্দিরা গান্ধীকে এক চিঠিতে জানান, ভারতের বিপদের সময় ইসরায়েল অতীতেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং এখনো তা করে যাচ্ছে। চিঠিতে তিনি অস্ত্র সাহায্যের প্রতিদান হিসেবে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত দেন। ইন্দিরা এই অনুরোধ এড়িয়ে যান।" [১৯]

রেফারেন্সঃ
প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান- মহিউদ্দিন আহমদ। পৃষ্ঠা ২৩৩,২৩৪
143 Views
2 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: