ফুলসজ্জা রাতে স্বামী বলেছিলো " সংসারটাকে আপন ভেবে সব কাজ করবে।তাহলে দেখবে নিজেকে দাসী নয়,রাণী মনে হবে "
ধীরে ধীরে সংসারের দায়িত্বগুলো নিতে শিখলাম।স্বামীর কথাটা সবসময় মেনে চলি। সপ্তাহ খানেক পর শ্বাশুড়ি মা বললেন
" ফোন দেখে দেখে রান্না করো তবুও সিদ্ধ হয় না,লবণ ঠিক হয় না? "
কথাটা উনি হেসে হেসে বললেও বেশ বুঝতে পারলাম"আমায় খোঁটা দিলেন।এরপর থেকে আরো তৎপর হয়ে উঠলাম। সব কাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে করি।
একদিন পেঁপে কা"টতেছি তখন আমার শ্বশুর বললেন " মা একটু চা খেতে ইচ্ছে করছে "
" দুই মিনিট লাগবে বাবা। চা বানানোই আছে,শুধু গরম করে দিবো "
পেঁপে কা!টা বন্ধ রেখে চা বানিয়ে দিলাম।তারপর ছাঁদে গেলাম কাপড় গুলো নিয়ে আসতে।পেঁপে গুলার কথা ভুলেই গিয়েছি।
মা রান্নাঘরে গিয়ে পেঁপের বাটিটা টেবিলে ঠাস করে রাখলেন । কঠিন স্বরে বললেন?
" পাকা পেঁপে গুলা কে!টে রেখে দিছো,মাছিতে ভনভন করতেছে । এগুলো খাওয়া যায়?মন কই থাকে তোমার?একটা পেঁপের দাম কত জানো? "
মায়ের কথায় চোখে জল চলে এলো।আমি যতোই আপন ভাবার চেষ্টা করি,ওনারা তো আপন ভাবেন না।সামান্য বিষয় নিয়ে যখন এভাবে কথা শুনতে হয় তখন সংসারটাকে আর আপন ভাবতে ইচ্ছে করে না।
একটা মেয়ে শুরুতে দুর্গা ই থাকে। অবহেলা, অপমান, খোটা,
এগুলো ধীরে ধীরে মেয়েদের দুর্গা থেকে কালি রূপে নিয়ে আসে।
আমি নির্চুপ ভাবেই কাজ করি। আমার স্বামী বাসায় আসলে সব কথা গুলো বলে যা দরকার তাও! যা না দরকার তাও। খুব কষ্ট হয় আমার, যাদের আপন ভাবার চেষ্টা করি তারাই আপন ভাবতে পারে না।
স্বামী কিছু না বললেও মার কথা মতো চলে। আমাকে বলে কি হচ্ছে এসব বাসার ভিতর,আমি বললাম কেনো কি হবে। বলে জেনেও না জানার ভান আমি পছন্দ করিনা। আমি যেনো আমার স্বামীর কথা গুলো শুনে আকাশ থেকে পরতেছি।
এই কি আমার স্বামী যার জন্য সবাই কে ছেড়ে আসছি। মার সব কথা শুনলো আমার কোনো কথা না শুনেই কি সব বলছে। আমি বললাম তোমার মা বানিয়ে বানিয়ে কি বলছে আমি যানিনা। এটা বলতেই একটা থাপ্পড় মারলো।
আমি কিছু বললাম না চুপ করে শুধু চোখের জল ঝরালাম। রাতে স্বামী আমাকে বলে আমার ভুল হইছে তোমাকে মারা ঠিক হয়নি। আমি আর কথা বললাম না সেও চুপ করে ঘুমিয়ে গেলো ।
পরের দিন ঘুম থেকে শুনতেছি কান্নার শব্দ, তারাহুরো করে উঠে দেখি আমার শ্বাশুড়ি।
আমি গিয়ে বললাম মা কি হইছে কান্না করছেন কেনো। বলে আমি মরে গেলে আসতা জিজ্ঞেস করতে আমি হা করে তাকিয়ে আছি কি হইছে বুঝতে পারছিনা। যাইহোক আবার বললাম কি হইছে খুলে বলেন? আমায় কিছুই বলল না। ছেলে আসলো ছেলেকে বলল আমি সারা রাত ব্যথায় মরি আর তোরা আরামে ঘুমাও।
ছেলেও তখন বুঝলো যে মা বউকে দেখতে পারেনা।
ছেলে বলল মা কেনো এমন করো তোমার কি কোনো প্রবলেম আছে,সেটা বলাতে আরো রেগে শেষ সেদিন আর খাওয়া দাওয়া করলো না। আমরা এগুলো দেখে খাইতে পারি, আমরাও না খেয়ে রইলাম, শশুর কিছু বললে ঝামেলা করে সেও চুপ করে থাকে। যানিনা কি আনছিলাম কপালে শাশুড়ী থাকবে মায়ের মতো, একটা মেয়ে চায় নতুন পরিবারে মাকে পেতে আর আমার পাওয়া হলোনা মনে হয়।
ছেলে রাতে মাকে বুঝিয়ে মাপ চেয়ে ভাত খাওয়ালো,দুইদিন আবার ঠিক ছিলো,একটা ছুতা পেলেই ঝামেলা করে। একদিন শাশুড়ী সত্যি অনেক অসুস্থ হয়ে পরে! হঠাৎ রাতের বেলা ব্যথায় চিৎকার করছে, শশুর মশাই ভাবছে প্রাই কোয়ারা করে আজও এমনটাই করছে। কিন্তু চিৎকারে অন্য কিছুই বুঝলাম। আমার স্বামীকে বললাম শুনছ তোমার মা কান্না করছে সেও এতো দিনে বুঝছে বলে ঢক করে। আমি দূরে গিয়ে দেখি বুক ধরে কান্নায় ভেঙে পরছে পরে যাওয়ার পাল্লা।
কি হলো মা কান্না করছেন বলেন আমাকে সেদিন আর কিছু বলল না বুঝলাম অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে কোথাও,স্বামীকে ডেকে নিয়ে আসলাম সে দেখে তারা তারি একটা গাড়ি আনলো আর আমরা হাসপাতালে গেলাম৷ অনেক গুলো পরিক্ষা দিলো রিপোর্ট বের হতে হতে সকাল হয়ে গেলো আর শাশুড়ী কে সুই দিয়ে ব্যথা কমিয়ে রাখছে। পরের দিন রিপোর্ট আসলো ৪টি হার্ড ব্লক হয়ে গেছে। খুব তারাতারি বাইপাস সার্জারি করাতে হবে। নতুন বিয়ে হয়েছে আমাদের বিয়ের সময় অনেক টাকা খরচ হইছে স্বামীর কাছে টাকাও নাই। এক ননদ? তাকে ফুন দিয়ে কিছু টাকা চাইলে সে নানান অজুহাত দিলো পরে বিরক্ত হয়ে ফুন রেখে দিল আমার স্বামী।
শাশুড়ীর জ্ঞান ফিরেছে সে আমাকে কাছে ডাকলো আর বললো বউ মা আমাকে মাপ করে দিও,আমি যদি মরে যাই আর আমার মেয়ে টাকা দিবে না তোমার শশুর বলছে। ওকে বইলো চিন্তা না করতে এতো টাকা কই পাবে আমার ঠিক হতে হবে না। আমাকে বাসায় নিয়ে যাও। কথা গুলো শুনে মনে হলো আমার মায় এগুলো বলছে আমি তার কথায় কান না দিয়ে তাকে খায়িয়ে চলে এলাম বাড়ি। আমার কষ্টের থেকে আনন্দ হচ্ছিলো কেনো যানেন?
আমার শাশুড়ী অসুস্থ বলে না,আমার শাশুড়ী আমার সাথে তার মেয়ের মতো কথা বলছিলো যার জন্য এতো দিন অপেক্ষায় ছিলাম যাই হোক! আমার বিয়ের সকল গহনা নিয়ে চলে গেলাম বিক্রির জন্য বেঁচে ভালোই টাকা হইছে, স্বামীকে দেওয়ার পর সে অবাক কই পাইছ আরো নানান প্রশ্ন? আমি বললাম গহনা বিক্রি করছি আর কিছু। সে বলল তোমার গহনা আমার মার জন্য বিক্রি করলা যে তোমায় দেখতে পারেনা। আমি বললাম মা আর মেয়ের ভিতর ভুল বুঝা বুঝি হতেই পারে, তাই বলে কি মা মেয়ের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। সে আর কিছু না বলে টাকা গুলো জমা দিলো।
ভালো মতো অপারেশন হলো, দুইদিন পর বাসায় নিলাম শাশুড়ী কে আর অনেক যত্ন করলাম সে ভুলেই গেলো আমি মেয়ে না বউ। পরের দিন তার মেয়ে আসলো দেখতে আমার শাশুড়ী তো ছাড়ার পাত্রি না বললো মরলে আসতি এতো দিনে সময় পাইলি।মেয়ে কিছু বলার সুযোগ পেলো না।
চলে গেলো মেয়ে! শাশুড়ী তার সব গহনা আমাকে দিয়ে দিলো সে তার ভুল বুঝতে পারছে। এখন আমরা এমন ভাবে থাকি কেও বুঝতেই পারবেনা সে আমার মা না শাশুড়ী।।
সব শাশুড়ীর দরকার তার ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মতো করে দেখা। তাহলেই শান্তি বজায় থাকে। হিংসা, অহংকার, লোভ, এসব মানুষকে খারাপ পথেই নিয়ে যায় বন্ধুরা ধন্যবাদ।
ছেলের বউ কখনোই মেয়ে হয়না😭
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
405
Views
15
Likes
2
Comments
4.3
Rating