পর্ব-১৩
- ভাইয়ের ছেলেডা অনেকদিন পর আইছে। সাইয়ারা থাকলে হের মা-জেডির ইট্টু সাহায্যে করবার পারতো। তুমার বোইনের উপরে তো আর এতো কামের ভার দিবার পারি না। বিয়া কইরা বউ নিছিলাম তো। কামের মানুষ নেই নাই যে সব সারাদিন কাম করাইবাম। আর ভাবিওতো একলা সব কাম করবার পারে না।
- আপনার ভাইয়ের না একটা মেয়েছিলো সেও তো সাহায্যে করতে পারে।
- তুমি তো জানই ছেড়িডার বিয়া ঠিক অইছে। শ্বশুড় বাড়িত গিয়া তো কাম করবোই। অহন একটু আরাম কইরালোক।
জামীরের কথায় ফাওয়ায হাসলো। সেই হাসি যে বিদ্রুপের তা জামীর ভালোর বুজতে পারলো।
- বউকে দিয়ে কাজ করাবেন না। কারণ কাজের মহিলা নেননি। সেই হিসাবে সাইয়ারাকেও কাজের মেয়ে হিসেবে জন্ম দেন নি নিশ্চয়। তার কে এসেছে আপনার ভাইয়ের ছেলে? তার জন্য সাইয়ারার যেতে হবে কেন? তার মা কি প*ঙ্গু। কাজ করতে পারে না। আর কি? আপনার ভাইয়ের মেয়ে শ্বশুড় বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হবে বলে এখন আরাম করে নিবে। আর সাইয়ারা তাকে কি বিয়ে দিবেন না? নাকি তার শ্বশুড় বাড়িতে তাকে কাজ করতে হবে না বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে।
ফাওয়ায একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো। তারপর শান্ত গলায় বললো..,
- সাইয়ারা যাবে না। আপনার ভাইয়ের ছেলে চলে গেলে বলবেন আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো। অন্যের ছেলে এসেছে বলে কাজ করার জন্য আমি আমার ভাগ্নিকে পাঠাবো না। আপনার কাছে সাইয়ারা আপনার অন্য মেয়েদের থেকে ভিন্ন হলেও সানজা, সারাহ, সানার মতোই সাইয়ারাও আমার ভাগ্নি। শুধু বড় মেয়ে বলে আমি ওকে আলাদা করতে পারবো না। বাকিরা আমার কাছে যা সাইয়ারাও তাই একটুও কম বেশি না।
বলেই ফাওয়ায চলে গেলো। অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেলো জামীরের। সাইয়ারার উপর রাগও হলো ভীষন। তার ভাষ্য মতে সাইয়ারা আজকে অপমানটার জন্য দায়ি। সে যদি মামার বাড়ি না আসতো তাহলে জামীরকেও আসতে হতো না। আর জামীর না আসলে ফাওয়াযও এতো কথা শোনানোর সাহস পেত না। সে মনোস্থির করলো সাইয়ারা আসলে সে এক মুহূর্তও এখানে থাকবে না। আর যতদিন না ফাওয়ায নিজে তাকে এ বাড়িতে আসার কথা বলে ততদিন সে এই বাড়িতে আর আসবে না। ফাজেলা তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আসতে চাইলে সে আটকাবে না কিন্তু সে আসবে না।
সাইয়ারা জামা কাপড় গুছিয়ে বোরকা পড়ে নিলো। ব্যাগ নিয়ে বাইরে আসতেই ফাওয়ায সাইয়ারার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিলো। তাকমিলা অনেকবার খেয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলো কিন্তু সে বাইরে খেয়ে নেবে বলে জানিয়ে দিলো। সাইয়ারা তাকমিলার সাথে সালাম বিনিময় করে বিদায় নিয়ে এগিয়ে গেলো। দাদির ঘরে ঢুকতে গেলে ফাওয়ায বাধা দিলো। সাইয়ারাকে দেখে জামীর উঠে দাড়ালো। সাইয়ারা নিম্ম স্বরে বলল..,
- বাবা এসেছে।
ফাওয়ায অবজ্ঞা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো..,
- তো।
“তো” শব্দটা কানে আসতেই জামীরের চোখ-মুখ কঠোর হয়ে উঠলো। লহরিকা বলে উঠলো..,
- কি কইতাছোস তুই। মুহো লাগাম লাগা কইয়া দিতাছি।
- মা মুখে লাগাম লাগানোর কাজ হলে লাগাম লাগানোর প্রয়োজন পড়তো না।
জামীর আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না। ফাওয়াযের দিকে রক্তচক্ষু দিয়ে বললো..,
- তুমি কিন্তু অহন বেশি করতাছো।
ফাওয়ায সাইয়ারাকে এগিয়ে যেতে বললো। সাইয়ারা কিছু না বলে এগিয়ে গেলো। তাকমিলা ফাওয়াযের হাত থেকে ব্যগটা নিয়ে সাইয়ারার পিছন পিছন গেলো। ফাওয়ায দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলো সাইয়ারা বাড়ি থেকে বের হলে ফাওয়ায চোখ সরিয়ে জামীরের দিকে তাকালো।
- হু, করলে করছি। প্রয়োজন পড়লে আরো বেশি করতে পারি। দেখবেন আপনি।
- আমি আমার ছেড়িরে নিবার আইছি এইনো তুমি কিছু কইবার আইবা না।
- আপনার মেয়ে।
কথাটা বলেই ফাওয়ায শব্দ করে হাসলো। হাসি থামিয়ে বললো..,
- আপনার মনে আছে সাইয়ারা আপনার মেয়ে। যাক শুনেও ভালো লাগলো। আমি তো ভেবেছিলাম সাইয়ারা যে আপনার মেয়ে সেটা আপনার মনেই নেই।
জামীর ফাওয়াযের সাথে না পেরে লহরিকাকে বলল..,
- মা আমি কিন্তু এইনো অপমান অয়ুনের লাইগ্গা আইছিনা। আমি আমার ছেড়িরে লইয়া যাইতাছিগা আর কুনুদিন এই বাড়িত আইতাম না।
লহরিকা জামীরকে শান্ত হতে বলে ফাওয়াযকে ধমকের সুরে বললেন..,
- তুই আর একটা কতাও কইবিনা। সাইয়ারার বাপ না চাইলে ছেড়ি এইনো থাকতো না। তুই হেরে বারণ করুনের কেডা। মাফ চা জামীরের কাছে।
- মা তোমার মেয়ের জামায়ের যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই থাকতো আমাকে বলতে হতো না। আমার তোমাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না, আমি যাচ্ছি।
কথাটা বলেই ফাওয়ায বেরিয়ে গেলো। জামীরও সেখানে একমুহূর্ত দাড়ালো না লহরিকারকে বিদায় জানিয়ে জামীরের পেছনে সেও বেরিয়ে গেলো। লহরিকা জামীরকে পেছন থেকে কয়েকবার ডাকলেও সে শুনলো না।
একটা রিক্সা এসে দাড়ালো ফাওয়াযদের বাড়ির সামনে। তাকমিলাকে উদ্দেশ্যে করে বললো..,
- ফাওয়ায বায়ে আইবার কইছিলো।
তাকমিলা “আসছ” বলে সাইয়ারাকে রিক্সায় উঠিয়ে ব্যাগটা সাইয়ারার পায়ের কাছে রেখে দরজার দিকে তাকালো। সেকেন্ট খানেক পর ফাওয়াযকে বেড়িয়ে এলো। ফাওয়াযের ক্রোধান্বিত মুখ দেখে তাকমিলা ভেতরে কিছু হয়েছে আন্দাজ করলো। ফাওয়ায তাকমিলার সামনে দাড়িয়ে শান্ত গলায় “সাবধানে থেকে বলে তাকমিলার উত্তরের আসা না করে রিক্সায় উঠে গেলো। তাকমিলা ফাওয়াযকে “সাবধানে যেও” বললে ফাওয়ায মুচকি হেসে মাথা নেড়ে রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা চালাতে বলল। রিক্সা চলতে শুরু করার সাথে সাথে জামীর বেড়িয়ে এলো। তাকমিলা একবার জামীরের ক্রোধান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে ভেতরে চলে গেলো। জামীর পেছন থেকে কয়েকবার উচ্চস্বরে সাইয়ারাকে ডাকলো। সাইয়ারা ফাওয়াযকে রিক্সা থামাতে বললে ফাওয়ায তাকে থামিয়ে দিলো। রিক্সা চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত জামীর অগ্নি চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। তার সাইয়ারাকে সজোরে একটা চড় মারতে ইচ্ছা করছিলো। জামীর নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো।
জামীরকে আসতে দেখে ফাজেলা দ্রুত পায়ে তার কাছে এলো। বিচলিত কন্ঠে জিঙ্গাসা করলো..,
- কি অইছে তুমার? ছেড়ি কই? আনছো না।
ফাজেলার কথাগুলো কর্ণগোচর হতেই জামীরের ঘুমন্ত রাগটা আবার জেগে উঠলো। উচ্চস্বরে বলে বলে উঠলো..,
- চুপ করবা তুমি।
জামীরের কথায় ফাজেলা কেঁপে উঠলো। এই প্রথম জামীর তাকে ধমক দিয়ে কিছু বললো। তাই তার চোখ দুটো পানিতে ভরে গেলো। বাড়ির সবাইও এতোক্ষনে জড়ো হয়ে গেছে কি হলো দেখতে। হিশমা বলে উঠলো..,
- ছেড়ি আইছেনা। দেহো কি ছেড়ি বানাইছো। অহনি বাপের কথা শুনে না কবে না শইল্লো আত তুইল্লা বো। এই ছেড়িরে আর বাড়িত ডুকবার দিয়ো না বাড়ির বাহি ছেড়িডি ন*ষ্ট অইবো এরে দেইখ্খা। বালা কতা কইলো তুমার বউয়ের তো বালা লাগে না। আমরা কি খারাপ কই। আর কইলেই কি মায়ি বালা না ছেড়ি কি বালা অইবো। বাবে আমরা হেগোর বালা চাই না।
পেছন থেকে মুনেম বলে উঠলো..,
- ছেড়া দেইখ্খা বিয়া দিয়া দেও। পড়ালেহায়ও তো বালা না যে পড়ালেহা করবো। জামাইরে ডাব্বা ডাব্বা রেজাল দেহাইবো।
- এইবার বিয়া দিওনি লাগবো।
কথাটা বলে জামীর ঘরে চলে গেলো। জালসান, হিশমা আর মাজেদা ফাজেলাকে কথা শুনাতে লাগলো সাথে যোগ দিলো মুনেমও।
জেবা দরজার কাছে দাড়িয়ে সব দেখছে আর মনে মনে বলছে..,
*এতোক্ষণ ইবলিশের চেলা-পেলা কম পড়েছিলো। সাথে ইবলিশের প্রধান সহকারি যোগ হলো।*
ইবলিশের চেলা-পেলা জালসান, হিশমা, মাজেদাকে আর ইবলিশের প্রধান সহকারি মুনেমকে বোঝালো। ফাজেলা কারো কথা কানে না নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে গেলো। তা দেখে হিশমা আর জালসানও চিৎকার করে ফাজেলাকে কথা শোনাতে থাকলো। জেবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেও ঘরে চলে গেলো। তার এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।
চলবে...
জানি ঠিকিই দেখা হবে (পর্ব ১৩)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
355
Views
8
Likes
5
Comments
4.3
Rating